মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:২৪
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাওজায়ে ইলমিয়ার ভূমিকা শক্তিশালী করা প্রয়োজন: আয়াতুল্লাহ আ’রাফি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রসমূহের পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আ’রাফি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাওজায়ে ইলমিয়ার সক্রিয় ও গভীর অংশগ্রহণের গুরুত্বে জোর দিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক ভাষা ও সংলাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইলমি উৎপাদন এবং সুপরিকল্পিত কার্যক্রম হাওজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। এর মাধ্যমে হাওজার প্রভাব শুধুমাত্র দেশীয় পর্যায়েই নয়, বিশ্বব্যাপী বাড়ানো সম্ভব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ আ’রাফি সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত “মানবিক সংঘর্ষ সমাধানে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা” শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের পরে ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার পরিচালনা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভায় এই মন্তব্য করেন। তিনি জানান, তিন দিনব্যাপী (বুধবার থেকে শুক্রবার) মালয়েশিয়ায় তাদের বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ইসলামিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হাওজার শিক্ষিতদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাগুলিতে সাংস্কৃতিক ও ধর্মপ্রচার কার্যক্রম, বৈজ্ঞানিক উন্নতি, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং মালয়েশিয়ার স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ আ’রাফি আরও জানান, মালয়েশিয়ার ধর্মগুরু, চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আঞ্চলিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উপস্থিতরা ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থার অবস্থান প্রশংসা করেছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত প্রদান করেছেন।

সম্মেলনের মূল আয়োজনে অংশগ্রহণ
আ’রাফি উল্লেখ করেন, সম্মেলনে প্রায় এক হাজার আলেম, চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ৫৪টি দেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন, এছাড়াও খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন পাঁচটি অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয়; এর মধ্যে দুটি অধিবেশনের দায়িত্ব ইরানের ওপর রাখা হয়। একটি অধিবেশন পরিচালনা করেন প্রফেসর মোল্লাঘি, এবং সমাপনী অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আয়াতুল্লাহ আ’রাফির। তিনি বক্তৃতা উপস্থাপন, আলোচনা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পর্যালোচনা প্রদান করেন।

ধর্মগুরুদের দুইটি প্রধান দায়িত্ব
আ’রাফি বলেছেন, ধর্মগুরুদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে:

১. ইসলামিক উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা, এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

২. অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। এই দুটি দায়িত্ব ধর্মগুরুদের কাজের ভিত্তি এবং ইসলামী বিপ্লবের সংলাপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ গুরুত্ব বহন করে।

গাজার পরিস্থিতি ও প্রতিরোধ
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি গাজার প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, গাজার জনগণের প্রতিরোধ ও ধৈর্য এবং প্রতিরোধ অক্ষের কার্যক্রম এক সঙ্গে চলমান; জায়নিস্টদের সীমাহীন অত্যাচার ও নৈতিক ক্ষয় অন্য দিকে। তিনি বলেন, ইরান এমন কোনো সরকারকে স্বীকৃতি দেয় না যা প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নয়। ফিলিস্তিনিদের নির্বাচনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়; অন্যথায় প্রতিরোধ ও জিহাদই মূলনীতি। সম্মেলনে আটটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপিত হয় যা কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত।

ইরানের আন্তর্জাতিক প্রভাব
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইরানের আঞ্চলিক ভূমিকার প্রশংসা করেন। সম্মেলনের পার্শ্ববর্তী বৈঠকে ইরান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, মিসর এবং স্থানীয় অন্যান্য দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

একতার গুরুত্ব ও যৌথ সংলাপ
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, ইসলামী একতা এবং ফিকহী ও দার্শনিক যৌথ সংলাপের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। সাধারণ ভিত্তিতে একতার ওপর মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে ইসলামী ঐক্য ও সহযোগিতা শক্তিশালী হয়। এছাড়াও নিজেদের অবস্থান ও ইসলামী বিপ্লবের সংলাপ বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে হবে।

গ্লোবাল সংলাপের পরিবর্তন ও সুযোগ-সুবিধা
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি উল্লেখ করেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংলাপ পরিবর্তন আমাদের জন্য সুযোগ, তবে পশ্চিমা ও সেকুলার ধ্যানধারার বৃদ্ধি থেকে অবহেলা করা যাবে না।

ধর্মগুরু ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ বৃদ্ধি
আ’রাফি বলেন, হোযারা এখন আরও আন্তর্জাতিক চিন্তাভাবনা ও সাহিত্য উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ইসলামী নীতি ও হক্কানী চিন্তাধারাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করা হোযারার দায়িত্ব। হাওজার এখনও যথাযথভাবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত নয়; এটি ঠিক করতে বিনিয়োগ ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য হাওজায়ে ইলমিয়ার অগ্রাধিকার
আ’রাফি জোর দিয়ে বলেন, হাওজার শিক্ষা বিষয়ক উৎপাদন আন্তর্জাতিক ভাষা ও সংলাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। মুসলিম বিশ্বের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, এবং আন্তর্জাতিক সংলাপ ও হাওজার সক্রিয় উপস্থিতি অপরিহার্য। আমাদের কাজের সঠিক পরিচিতি এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, যাতে ইসলামের চিন্তাভাবনা অন্যান্য ধর্ম ও মাদ্রাসার সঙ্গে তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন করা যায়।

সার্বিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ
হাওজার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তুলনামূলক ও পুনর্নির্মাণকৃত জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংলাপে এগিয়ে আসতে হবে। এটি একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় নীতি ও কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে যথেষ্ট নয়; আরও কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, যখন হোযারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত হবে এবং শক্তিশালী, প্রভাবশালী সংলাপ তৈরি করবে, তখন এর ইতিবাচক প্রভাব দেশীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতেও দৃশ্যমান হবে। হোযারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উচ্চ লক্ষ্য ও সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইসলামী সংলাপকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha