হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আহমদ মারভী বলেন, আলেমসমাজ ও রুহানিয়্যাতের উচিত তরুণ প্রজন্মকে জাতির প্রকৃত সক্ষমতা ও সম্ভাবনার সাথে পরিচিত করা।
ঐক্য: জাতির বিজয়ের চাবিকাঠি
মাশহাদের হারামে মুতাহ্হার ইমাম রেযা (আ.)–এর ভিলায়াত হলে আয়োজিত বৈঠকে হুজ্জতুল ইসলাম মারভী বলেন, “আজকের দিনে দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো জনগণের ঐক্য ও সংহতি। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী (দা.হা.) যেমন ‘মুকাদ্দাস ওয়াহদাত’ (পবিত্র ঐক্য)-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, ঠিক তেমনই আমাদেরও উচিত। খতিবরা এ বার্তার পতাকাবাহী হোক এবং রাজনৈতিক বিভাজনের খেলায় জড়িয়ে না পড়ে।”
প্রতিরক্ষা যুদ্ধের শিক্ষা
হুজ্জাতুল ইসলাম মারভী উল্লেখ করেন, আলেমসমাজকে স্পষ্ট ও আশাব্যঞ্জক ভাষায় নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, কীভাবে ইরানি জাতি আট বছরের প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল এবং ঈমান ও ধৈর্যের মাধ্যমে তা অতিক্রম করেছিল।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের শুরুতে কোনো সংগঠিত সেনাবাহিনী বা আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। তবুও, জনগণ ঈমান, ঐক্য ও দৃঢ়তার মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে। বিপ্লবের পূর্বে বিশ্বশক্তিগুলো সর্বশক্তি দিয়ে শাহি শাসন রক্ষা করতে চেয়েছিল, তবুও ইসলামী বিপ্লব জয়লাভ করে।
আশা সঞ্চার: সময়ের দাবি
“আজ সমাজে আশা সৃষ্টির চেয়ে বড় দায়িত্ব আর কিছু নেই। সর্বোচ্চ নেতা বহুবার বলেছেন, শত্রুর চাপ মোকাবিলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শত্রুরা কখনোই ষড়যন্ত্র বা অজুহাত তৈরি থেকে বিরত থাকবে না।”
আয়াতুল্লাহ মারভী পশ্চিমাদের ভণ্ডামির দিকেও ইঙ্গিত করে বলেছেন, “তারা জানে ইরান কখনো পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায়নি এবং সব কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নজরদারিতে সম্পন্ন হয়। তবুও তারা অজুহাত সৃষ্টি করে। লিবিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়, এমনকি যখন কোনো দেশ সব পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করেছে, তবুও পশ্চিমারা তাদের ছেড়ে দেয়নি। তাদের কাছে অসহনীয় হলো ইসলামী বিপ্লবের সেই চিন্তাধারা, যা তাদের স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করে।”
ইমাম রেজা (আ.)–এর দোয়া: আলেমদের আশ্রয়
আয়াতুল্লাহ মারভী বলেন, “এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো আলেম ও খতিবদের ধন্যবাদ জানানো এবং তাঁদের আমলের কবুলিয়্যাত কামনা করা। নিশ্চিতভাবেই, ইমাম হুসাইন (আ.)–এর রোওজাখানি যদি জ্ঞান ও তাকওয়ার সঙ্গে হয়, তা ইজ্জত ও গৌরবের কারণ হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “রওজাখানি শুধু শোকগাথা পাঠ নয়, বরং ইসলামী শিক্ষার ব্যাখ্যা, আহলে বাইতের (আ.) জীবনপাঠ এবং জনগণকে হকপথে পরিচালিত করাই এর মূল দায়িত্ব। রওজাখান ও খতিবরা সর্বদা ইমাম রেজা (আ.)–এর দোয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকেন। যেমন হযরত বলেছেন: «رحم الله عبداً أحیا أمرنا»—যে আমাদের আদর্শকে জীবিত রাখবে, সে ইমাম রেজা (আ.)–এর দোয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবে।”
মহররম ও বিপ্লবের ভূমিকা
আয়াতুল্লাহ মারভী ইমাম খোমেনী (রহ.)–এর বাণী স্মরণ করে বলেন, “মহররম হলো রক্তের তরবারির ওপর বিজয়ের মাস। এই মাস ১৯৭৯ সালের বিপ্লবে জাতির আত্মবিশ্বাস ও বিজয়ের চেতনা জাগিয়ে তুলেছিল। তাই ইমাম খোমেনী (রহ.)–এর স্মৃতিচারণ আমাদের জন্য অপরিহার্য।”
তিনি বলেন, “ইমাম খোমেনী (রহ.) তাঁর অসাধারণ সেবার মাধ্যমে ইসলাম, শিয়া মাযহাব ও ইরানের হক্কানিয়্যাত পুনর্গঠন করেছেন। তাঁর চিন্তাধারা ও সীরাত জানা সবসময় অপরিহার্য, বিশেষত নতুন প্রজন্মের প্রশ্ন ও সংশয়ের উত্তরের জন্য।”
আলেমদের জীবনচরিত অধ্যয়নের গুরুত্ব
আয়াতুল্লাহ মারভী খতিবদের অনুরোধ করেন, “শুধু বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় পাঠ্য নয়, আলেমদের জীবনচরিত অধ্যয়নও আপনার অগ্রাধিকার হোক। বিশেষ করে ইমাম খোমেনী (রহ.)–এর জীবনচরিত অধ্যয়ন জরুরি, কারণ তারা হাওজার চিন্তাগত ও আত্মিক ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কারো অনুপ্রেরণা জাতীয়তাবাদী হয়, তবুও ইমাম খোমেনীকে ভালোবাসা জরুরি, কারণ তিনি জাতীয় মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর যদি ধর্মীয় প্রেরণা থাকে, তবে তাকে শ্রদ্ধা করা প্রয়োজন, কারণ তিনি ধর্মকে পুনর্জীবিত করেছেন এবং ইসলামী মর্যাদা পুনঃস্থাপন করেছেন।”
রুহানিয়্যাত ও আজাদারির পক্ষে ইমাম খোমেনীর দৃঢ়তা
“ইমাম খোমেনী (রহ.)–এর সীরাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল রোজাখানি ও আজাদারির প্রতি বিশেষ মনোযোগ। বিপ্লবের সংগ্রামকালে এগুলো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছেন, যারা রুহানিয়্যাতকে শাসন থেকে বাদ দিতে বা আজাদারিকে সীমিত করতে চেয়েছিল। তিনি আসল রওজাখানির মর্যাদা অটুট রেখেছেন।”
আপনার কমেন্ট