মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:০১
তওবা বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন

তওবা (অনুতাপ ও অনুশোচনা) ইসলামের এক মহান নৈতিক ও আত্মিক শিক্ষা। আল্লাহ্‌ তাআলা অসীম রহমতশীল; তিনি বান্দার আন্তরিক তাওবা সর্বদা কবুল করেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হযরত আলী (আলাইহিস সালাম) তওবার প্রকৃত রূপ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি (আ.) বলেছেন,

التّوبَةُ نَدَمٌ بِالْقَلْبِ وَ اسْتِغْفارٌ بِاللِّسانِ وَ تَرْكٌ بِالْجَوارِحِ، وَ اِضمارٌ أنْ لایَعُودَ

“তাওবা হলো—

১. অন্তরে গভীর অনুশোচনা

২. জিহ্বায় ইস্তিগফার

৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গুনাহ ত্যাগ

৪. এবং দৃঢ় সংকল্প যে আর কখনো সেই গুনাহে ফিরবে না।”

[গুরারুল হিকাম গ্রন্থ, ১ম খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা]

কুরআনের আলোকে তওবা
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে তওবার শর্ত ও মাহাত্ম্য সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন:

১. অন্তরিক তওবা

“হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

[সুরা তাহরীম ৬৬:৮]

২. অজ্ঞতার পর তওবা

“যারা অজ্ঞতার কারণে গুনাহ করে, পরে দ্রুত তাওবা করে নেয়—আল্লাহ্‌ তাদের তাওবা কবুল করেন।”

[সুরা নিসা ৪:১৭]

৩. আল্লাহর অসীম রহমত

“বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।”

[সুরা যুমার ৩৯:৫৩]

আহলে বাইতের (আ.) হাদিসে তওবা
১. ইমাম আলী (আ.): “আল্লাহ্‌র দরবারে তওবা হলো—অনুশোচনা, ইস্তিগফার, গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং আর কখনো তাতে না ফেরার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
[গুরারুল হিকাম গ্রন্থ ১ম খন্ড, ৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা]

২. ইমাম বাকির (আ.): “একজন তওবাকারী বান্দা হলো সেই ব্যক্তি, যে গুনাহ করার পর মনে করে আর কখনো গুনাহ করেনি, কারণ আল্লাহ্‌ তার গুনাহ মুছে দেন।”
[উসুল আল কাফী গ্রন্থ, ২য় খন্ড, ৪৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা]

৩. ইমাম সাদিক (আ.): “আল্লাহ্‌র কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা সেই, যে গুনাহ করে পরে তওবা করে।”
[বিহারুল আনোয়ার গ্রন্থ,৬ষ্ঠ খন্ড, ২৮ নম্বর পৃষ্ঠা]

৪. রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.ও.আ.): “যে তওবা করে, সে এমন যেন কখনো গুনাহ করেনি।”
[মান লা ইয়াহদারুল ফাকিহ ৪ খন্ড ৩৭৩ নম্বর পৃষ্ঠা]

গবেষণামূলক বিশ্লেষণ
ইমাম আলী (আ.)-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী তওবা চারটি ধাপে সম্পূর্ণ হয়:
১. অন্তরের পরিবর্তন→হৃদয়ে অনুশোচনা ছাড়া তাওবা অসম্পূর্ণ।
২. ইস্তিগফার → আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৩. কর্মে পরিবর্তন →গুনাহ থেকে বাস্তবে দূরে থাকা।
৪. দৃঢ় অঙ্গীকার → পুনরায় গুনাহে না ফেরার শপথ নেওয়া।

পরিসমাপ্তি: তওবা কেবল কথার উচ্চারণ নয়, বরং এটি অন্তরের বিপ্লব এবং জীবনের পরিবর্তনের অঙ্গীকার। আহলে বাইতের (আ.) হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, তওবা বান্দাকে একেবারে নতুনভাবে জন্ম দেয়। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবাকারী বান্দা হিসেবে কবুল করুন।

সূত্রসমূহ:

১. সুরা তাহরীম ৬৬:৮,

২. সুরা নিসা ৪:১৭,

 ৩. সুরা যুমার ৩৯:৫৩

৪. গুরারুল হিকাম ১খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা।

৫. উসুল আল কাফী, ২য় খন্ড, ৪৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা।

৬. বিহারুল আনোয়ার, ৬খন্ড, ২৮ নম্বর পৃষ্ঠা।

৭. মান লা ইয়াহ্দারুল ফাকিহ, ৪খন্ড, ৩৭৩ নম্বর পৃষ্ঠা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha