সোমবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৭:৫৯
স্ন্যাপব্যাক ইউরোপের পররাষ্ট্রনীতির  অবিশ্বস্ততার প্রমাণ

ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সাবেক প্রধান ও নীতিনির্ধারণী পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল মোহসেন রেজায়ি বলেছেন, স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম ইরানের জন্য যতটা হুমকি নয়, তার চেয়ে বেশি ইউরোপের পররাষ্ট্রনীতির অবিশ্বস্ততা ও ব্যর্থতার প্রতীক।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল রেজায়ি এই মন্তব্য করেন।

ইউরোপের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও আমেরিকার চাপ
তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা ইরানকে আশ্বাস দিয়েছিল যে আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গে সমঝোতা হলে স্ন্যাপব্যাক কার্যকর হবে না। কিন্তু কায়রোতে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর আমেরিকার চাপের মুখে ইউরোপীয়রা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। এমনকি চীন ও রাশিয়ার পরামর্শে প্রস্তাবিত পরিবর্তন সত্ত্বেও ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়।

ইউরোপের স্বাধীনতাহীনতা
মেজর জেনারেল রেজায়ি জোর দিয়ে বলেন, এ অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে ইউরোপের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো স্বাধীনতা নেই। তারা আমেরিকার চাপে বারবার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তাঁর মতে, স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় করা আইনগতভাবে বৈধ নয়, কারণ ইরান চুক্তির সব শর্ত মান্য করেছে এবং দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরদারিতে থেকেছে।

ইরানের প্রতিশ্রুতি, পাশ্চাত্যের ব্যর্থতা
তিনি বলেন, ইরান পরমাণু চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকেছে, অথচ পাশ্চাত্য দেশগুলো তাদের অঙ্গীকার লঙ্ঘন করেছে। তাই স্ন্যাপব্যাকের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। চীন ও রাশিয়াও এ পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। মেজর জেনারেল রেজায়ির মতে, আমেরিকা ও ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ব্যর্থ না হতো, তবে স্ন্যাপব্যাকের পথে যেত না।

নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর প্রমাণিত
তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে সর্বোচ্চ চাপের মধ্যেও ইরানের তেল বিক্রি ২০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০–৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তাঁর মতে, অনেক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কার্যকর নয় এবং বড় শক্তিগুলো (চীন ও রাশিয়া) সহযোগিতা না করায় তা প্রয়োগযোগ্যও নয়। নতুন প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার ৩ শতাংশেরও কম বাস্তবায়নযোগ্য, আর সেগুলো মোকাবিলায় সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে।

মেজর জেনারেল রেজায়ি বলেন, এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মূলত মনস্তাত্ত্বিক এবং সাধারণত তিন থেকে নয় মাস স্থায়ী হয়। বাস্তব প্রভাব তিন–চার মাসের বেশি টেকে না।

কূটনীতিতে নতুন দিকনির্দেশ প্রয়োজন
মেজর জেনারেল রেজায়ি জোর দিয়ে বলেন, আলোচনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাঁর ভাষায়, “মাঠ” অর্থাৎ প্রতিরোধ ও বাস্তব শক্তিই অগ্রাধিকার পাবে, আর আলোচনা হবে কেবল সেই শক্তিকে সমর্থন করার জন্য। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি আলোচনার বিপক্ষে নই, তবে কেবল সেই আলোচনাই গ্রহণযোগ্য হবে যা দেশের শক্তি বাড়াবে।”

তিনি সতর্ক করেন, আলোচনার সময় যদি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক চাপ প্রয়োগ হয়, তবে ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, আমেরিকার আঞ্চলিক স্বার্থকেও লক্ষ্যবস্তু করবে।

নতুন লালরেখা
মেজর জেনারেল রেজায়ি বলেন, ইরানের উচিত পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন লালরেখা নির্ধারণ করা। “আলোচনা যেকোনো শর্তে, যেকোনো মূল্যে বা উদ্দেশ্যহীনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।” তাঁর মতে, আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, তবে তা অবশ্যই নতুন কাঠামো ও সুস্পষ্ট পূর্বশর্তের ভিত্তিতে হতে হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha