মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:৩০
রাশিয়া–ইরান কৌশলগত চুক্তি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই চুক্তি রাশিয়া ও ইরানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন, যার লক্ষ্য হলো সর্বাত্মক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সদ্ভাবপূর্ণ প্রতিবেশীতাকে আরও সুদৃঢ় করা।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মস্কো আরও বলেছে, এই অগ্রগতি দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা তাদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছে।

চুক্তিটি রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সামরিকসহ সব খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর তেহরানে ইরানের তেলমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী সের্গেই সিভিলিয়ভ এবং গ্যাজপ্রমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলেক্সেই মিলারের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইরানের তেল মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সংস্থা শানা জানায়, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ইরান–রাশিয়া যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

পাকনেজাদ জানান, আলোচনা মস্কোয় অনুষ্ঠিত ১৮তম যৌথ কমিশনের সিদ্ধান্তসমূহের ওপর ভিত্তি করে এগিয়েছে। তিনি বলেন, “সেসব ফলাফল আরও অনুসরণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন ছিল,” এবং বৈঠকে উভয় পক্ষ তা বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেছে।

তিনি আরও যোগ করেন, কিছু সহযোগিতার ক্ষেত্র পুনর্বিবেচনা ও অতিরিক্ত আলোচনার দাবি রাখে, যা বৈঠকে আলোচনা ও সমাধান করা হয়েছে।

ইরানে আয়োজিত হতে যাওয়া ১৯তম যৌথ কমিশনের সময়সূচি ও এজেন্ডা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পাকনেজাদ। তিনি বলেন, বিষয়গুলো “উপযুক্ত সময়ে” ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে, ২৩ সেপ্টেম্বর মস্কোয় ইরানের শিল্প, খনন ও বাণিজ্যমন্ত্রী সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আতাবাক রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেতনিকভের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ইরান–ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (EAEU) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম যৌথ কমিটির অধিবেশনে, যা তেহরান টাইমস প্রকাশ করেছে।

রেশেতনিকভ বলেন, ২০২৫ সাল ইরান–রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্কে এক “টার্নিং পয়েন্ট” হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এ সময়ে মস্কো–তেহরানের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর, EAEU-এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হওয়া, এবং ইরানের ওই ব্লকে পর্যবেক্ষক সদস্যপদ লাভ—সবই দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন গতি দিয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য লেনদেন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির পেছনে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে দৃঢ় অঙ্গীকারই মূল কারণ।

রেশেতনিকভ চুক্তির প্রতি রাশিয়ার অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দ্রুত অগ্রগতির আশা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে আতাবাক—যিনি ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জলালির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে বেসরকারি খাতের ভূমিকার ওপর জোর দেন এবং আর্থিক লেনদেনের সীমাবদ্ধতা ও পণ্যের মানের পার্থক্যসহ বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান।

তিনি আন্তর্জাতিক নর্থ–সাউথ ট্রানজিট করিডর (INSTC) সম্পন্ন করার প্রতি ইরানের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন। আতাবাক জানান, রাশত–আস্তারা রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।

ইরান ও EAEU তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে স্বাক্ষর করে। সদস্য দেশগুলোর অনুমোদনের পর ২০২৫ সালের মে মাসে এটি কার্যকর হয়, যার ফলে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য হওয়া প্রায় ৮৭ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়।

EAEU-তে সদস্য দেশ হলো রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া; আর ইরান, উজবেকিস্তান ও কিউবা বর্তমানে পর্যবেক্ষক সদস্য।

ইরানের কাস্টমস প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ইরানি বর্ষপঞ্জি (যা ১৯ মার্চে শেষ হয়েছে) বছরে EAEU সদস্য দেশগুলোতে ইরানের রপ্তানি ২০ শতাংশ বেড়ে ২.০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.০৫৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।

রপ্তানির দেশভিত্তিক বণ্টন হলো: রাশিয়ায় ১.১২১ বিলিয়ন ডলার, আর্মেনিয়ায় ৫০৫ মিলিয়ন, কাজাখস্তানে ২৭৮ মিলিয়ন, কিরগিজস্তানে ১১১ মিলিয়ন, এবং বেলারুশে ২১ মিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে, ইরান EAEU সদস্য দেশগুলো থেকে ২.১৭৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করেছে, যার মূল্য ১.৫১ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় আমদানির পরিমাণে ৩৯ শতাংশ এবং মূল্যে ২০ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে।

ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, ইরানের EAEU মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (FTA) অধীনে নির্ধারিত রপ্তানি লক্ষ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ অর্জনে ইস্পাত ও পেট্রোকেমিক্যাল খাত মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। এই খাতগুলো আঞ্চলিক বাণিজ্য সুযোগ বৃদ্ধি ও রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha