শুক্রবার ১০ অক্টোবর ২০২৫ - ১৮:৪৬
পুতিনকে নেতানিয়াহু’র অনুরোধ: ইরানকে জানান— “আমরা যুদ্ধ চাই না”

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইসরায়েলি নেতারা তাঁকে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি ইরানের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেন যে, ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে আর কোনো সংঘাত চায় না এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে আগ্রহী।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ১৩ জুন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইরানের ওপর উসকানিমূলক ও অঘোষিত হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যা টানা ১২ দিনের যুদ্ধে পরিণত হয়। ওই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয় এবং শত শত বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান। যুক্তরাষ্ট্রও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।

১২ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটে ২৪ জুন, যখন ইরানের ব্যাপক পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরাজিত ইসরায়েল তখন বাধ্য হয়ে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

বৃহস্পতিবার তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে অনুষ্ঠিত “কেন্দ্রীয় এশিয়া–রাশিয়া সম্মেলনে” বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁকে ইরানের উদ্দেশে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছে।

তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থাভিত্তিক যোগাযোগ বজায় রাখছি। ইসরায়েলি নেতৃত্ব আমাদের অনুরোধ করেছে যেন আমরা আমাদের ইরানি বন্ধুদের জানাই— ইসরায়েল কোনো ধরনের সংঘাত চায় না; বরং গঠনমূলক সমাধানের পথে অগ্রসর হতে চায়।”

রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ দূর করার একমাত্র কার্যকর পথ হলো কূটনীতি ও সংলাপ। এই সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধান কেবল আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব— এর কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা আমাদের ইরানি অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছি এবং লক্ষ্য করছি, তারা পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা পুনরায় শুরু করতে ইচ্ছুক।”

পুতিন জানান, সম্প্রতি আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি মস্কো সফর করেন এবং উভয় পক্ষ ইরানের পরমাণু বিষয়ক ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা করে। “গ্রোসি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ইরান সব ইস্যু শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে আগ্রহী। এখনো কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় বাকি আছে, তবে এগুলো নিয়ে অর্জিত চুক্তিগুলো বাস্তবায়িত হলে এই জটিল আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে,” তিনি বলেন।

ইরান জানিয়েছে, তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং বেআইনি পদক্ষেপের সরাসরি ফল।

২০১৫ সালে তেহরান “যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা” (জেসিপিওএ) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যার আওতায় কঠোর সীমাবদ্ধতার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়, আর ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে ইরানের সামনে ধীরে ধীরে চুক্তির বাধ্যবাধকতা হ্রাস করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে জুন মাসে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। এর জবাবে তেহরান আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে এবং সংস্থাটির নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানায়।

২৮ আগস্ট ইউরোপীয় ত্রয়ী দেশ জেসিপিওএর “স্ন্যাপব্যাক” প্রক্রিয়া সক্রিয় করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ নেয়। ইরান এই পদক্ষেপকে বেআইনি বলে প্রত্যাখ্যান করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, ফলে ইউরোপের এই অবস্থান বৈধ নয় এবং অবৈধ চাপের অংশমাত্র।

রাশিয়া ও চীন কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালালেও ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাদের প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়।

সেপ্টেম্বরে তেহরান কায়রোতে আইএইএর সঙ্গে নতুন সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে ইরান পরে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়— যদি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়, তবে সেই চুক্তি কার্যকর হবে না।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha