হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিহাসের পাতায় বহু চরিত্র এমন আছে যারা ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু অন্তরে তার সত্যনিষ্ঠ আলোক কখনো গ্রহণ করেনি। তাদের মধ্যে অন্যতম নাম—মু‘আবিয়া ইবন আবি সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে এই নামটি শুধু রাজনীতি বা ক্ষমতার প্রতীক নয়, বরং একটি বিভ্রান্ত যুগের সূচনা যেখানে ধর্মের আড়ালে স্বার্থ ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রবল হয়ে উঠেছিল।
আম্মার ইয়াসির (রা.)—যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবী ও সত্যের মশালবাহী এক মহান শহীদ—সিফফিনের যুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গের পূর্বে বলেছিলেন এমন একটি বাণী, যা ইতিহাসের বিবেককে চিরকাল জাগ্রত রাখবে। তিনি বলেছিলেন: “আল্লাহর কসম! মু‘আবিয়া ও তার সঙ্গীরা মুসলমান হয়নি; তারা কেবল আত্মসমর্পণ করেছিল। তারা তাদের কুফরকে অন্তরে লুকিয়ে রেখেছিল, আর যখন তারা তাতে সহযোগী পেল, তখনই তা প্রকাশ করল।”
(মাজমা‘উজ-জাওয়াইদ, হাইসামি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৮)
এই ঘোষণা ছিল শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের আহ্বান নয়—এ ছিল আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি। আম্মার (রা.) যেন আলী (আ.)-এর মুখপাত্র হয়ে সত্যের সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন।
আমীরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর ভাষায় সত্যের ঘোষণা
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-ও মু‘আবিয়া ও তার বংশের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ও অকপট ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত পত্রসমূহের একটিতে (নাহজুল বালাগা, চিঠি নং ১৬) তিনি বলেন:
«وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا أَسْلَمُوا»
“শপথ সেই আল্লাহর, যিনি বীজকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণ সৃষ্টি করেন—তারা কখনো মুসলমান হয়নি।”
এই শপথের ভাষা কেবল ঐতিহাসিক অভিমত নয়, বরং একজন ইমামের অন্তর্দৃষ্টির ফয়সালা। আলী (আ.) স্পষ্ট জানিয়ে দেন—মু‘আবিয়া ও তার পিতা আবু সুফিয়ান ইসলামের আলো গ্রহণ করেনি, বরং কেবল মক্কার বিজয়ের পর পরাজয়ের মুখে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের অন্তরে কুফর লুকানো ছিল; সময় ও শক্তি হাতে আসতেই তা প্রকাশ পায়।
শাজারা মালঊনা — অভিশপ্ত বৃক্ষের ছায়া
ইমাম আলী (আ.)-এর ভাষায়, মু‘আবিয়ার বংশকে বলা হয়েছে “শাজারা মালঊনা”—অভিশপ্ত বৃক্ষ। এই বংশের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের মূল শেকড়কে শুকিয়ে ফেলা, নবুওয়াতের আলোকে ক্ষমতার অন্ধকারে মুছে দেওয়া।
কিন্তু ইতিহাসের সৌন্দর্য এইখানেই—যে রক্ত ইসলামকে টিকিয়ে রেখেছিল, তা ছিল আম্মারদের, সালমানদের, মিকদাদদের ও আলীদের রক্ত। সিফফিনের ময়দানে আম্মারের রক্ত যেন চিরকাল ঘোষণা করে গেল—
“ইসলাম শুধু মুখের উচ্চারণ নয়, বরং হৃদয়ের বিশ্বাস ও ত্যাগের নাম।”
মু‘আবিয়া হয়তো রাজনীতিতে সফল হয়েছিল, কিন্তু তার উত্তরাধিকার ইসলামের আত্মায় এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। অন্যদিকে আম্মার (রা.)-এর মতো সাহাবীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে সেই আত্মাকে জীবন্ত রেখেছিলেন।
ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়—
ক্ষমতা নয়, রক্তই সত্যকে অমর করে।
যারা সত্যের জন্য প্রাণ দিয়েছে, তারাই ইসলামের প্রকৃত রক্ষক; আর যারা মিথ্যার আড়ালে ইসলামকে ব্যবহার করেছে, তারা কালের কাছে চিরকাল অভিশপ্ত থেকে যাবে।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট