মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর ২০২৫ - ১৯:৩৮
জামকরানে “কারিমা আহলে বাইত (আ.)” শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের সূচনা-শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব

“আমিন শিক্ষা প্রকল্প” এখন ইরানের হাওজা ইলমিয়ার একটি আদর্শ প্রশিক্ষণ মডেলে পরিণত হচ্ছে, যা মাদরাসা, মসজিদ ও প্রচারককে একক ও সমন্বিত ব্যবস্থায় যুক্ত করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়া ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক সহযোগিতায় আয়োজিত “কারিমা আহলে বাইত (আ.)” শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জামকরানের “মজতামা ইয়াওরানে হজরত মাহদি (আ.)”–এ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রাদেশিক দাওয়াতি সহকারী, জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ, “মাদারেসে আমিন” প্রকল্পের প্রতিনিধিগণ এবং বহু ধর্মীয় ও শিক্ষাবিদ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা হুজ্জাতুল ইসলাম নিকজাদের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হুজ্জাতুল ইসলাম নিকজাদ। তিনি বলেন, আপনারা হচ্ছেন প্রথম সারির মুজাহিদ। আজ শত্রুর সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হলো আপনাদের মতো দাঈ (প্রচারক) ও মুবাল্লিগদের মাদরাসা থেকে দূরে রাখা, যাতে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, মসজিদ ও মাদরাসাকে কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়। যদি আমরা চাই নতুন প্রজন্ম ধর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকুক, তবে আমাদের উচিত শিশুদের মাদরাসা থেকে মসজিদের দিকে নিয়ে আসা।
নিকজাদ বলেন, আয়াতুল্লাহ আরাফির দিকনির্দেশনায় ছাত্র ও প্রচারকদের বস্তুগত ও মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মাদরাসা কেবল শিক্ষার কেন্দ্র নয়, এটি চরিত্রগঠন ও আত্মশুদ্ধির প্রতিষ্ঠানও বটে—বিশেষত শৈশব ও কৈশোর বয়সের শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।

তিনি “আমিন প্রকল্পের” দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করুন, তাদের কথা শুনুন, হাত ধরে পথনির্দেশ দিন এবং প্রতি মাসে তাদের সঙ্গে অন্তত একটি প্রশিক্ষণমূলক সভা আয়োজন করুন। কারণ, কাজ যদি আন্তরিকতা ও নৈতিকতার সঙ্গে করা হয়, তবে আল্লাহ নিজেই সাহায্য করেন; কিন্তু আন্তরিকতা ছাড়া কোনো কাজ ফলপ্রসূ হয় না।

জামেয়াতুজ যাহরা (আ.)-এর প্রচার ও সাংস্কৃতিক সহকারী শারিফির বক্তব্য

অনুষ্ঠানে জামেয়াতুজ যাহরা (আ.)–এর প্রচার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহকারী মহোদয়া শারিফি বলেন, আমিন প্রকল্প, হওযা ইলমিয়ার একটি বিপ্লবাত্মক উদ্যোগ, যা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই মডেল পুরো বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

তিনি বলেন, একজন ‘মুবাল্লিগে আমিন’ (বিশ্বস্ত প্রচারক) সেই ব্যক্তি, যিনি নতুন প্রজন্মের ঈমান ও চিন্তাগত আমানতের রক্ষক।
তিনি আরও যোগ করেন, যৌবনকাল হলো পরিচয় গঠনের সময়, আর ঠিক এই পর্যায়কেই শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

মহোদয়া শারিফি বলেন, আজকের যুদ্ধ সামরিক নয়; এটি একটি পরিচয় বা জ্ঞানভিত্তিক যুদ্ধ (Cognitive War)। শত্রু যুবকদের মনে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিশ্বাস ও চিন্তাকে দুর্বল করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, আমিন প্রকল্পের প্রচারকরা শুধু ধর্মীয় শিক্ষক নন; তাঁরা ‘সফট ওয়ার’-এর সৈনিক—ঈমান ও পরিচয়ের রক্ষক। তাঁদের দায়িত্ব হলো ধর্মীয় ধারণাগুলো সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করা এবং বিভ্রান্তির সময়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা।

হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিইর বক্তব্য

হাওজা ইলমিয়ার প্রচার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রধান, হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন রাফিই বলেন, ইসলামী বিপ্লব আমাদের জন্য এক অসাধারণ সুযোগ এনে দিয়েছে—আমরা নিজেরাও উন্নতি করতে পারি এবং সমাজকেও অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারি।

আমিন প্রকল্পের তাৎপর্য

উল্লেখ্য, “আমিন শিক্ষা প্রকল্প” এখন ইরানের হাওজা ইলমিয়ার একটি আদর্শ প্রশিক্ষণ মডেলে পরিণত হচ্ছে, যা মাদরাসা, মসজিদ ও প্রচারককে একক ও সমন্বিত ব্যবস্থায় যুক্ত করে।
এই মডেল নতুন প্রজন্মের ঈমান, নৈতিকতা ও চিন্তাগত স্থিতিশীলতার এক মজবুত ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha