বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫ - ১৩:২২
“সিনওয়ার সিনারিও”— ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তিতে তেলআবিবের আতঙ্ক

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তিকে ঘিরে তেলআবিবের ভয় ও উদ্বেগের মূল কারণ হলো “সিনওয়ার সিনারিও”— অর্থাৎ ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মতো নতুন প্রতিরোধ নেতাদের উত্থানের আশঙ্কা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পশ্চিমা গণমাধ্যম কাহিরা ২৪ সংবাদপোর্টালের বরাতে জানায়, পশ্চিমা পত্রিকাগুলোর মধ্যে বিশেষত ফরাসি দৈনিক ল্য ফিগারো (Le Figaro) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু ফিলিস্তিনি বন্দির প্রভাব ও ব্যক্তিত্ব এমন এক নতুন ইয়াহইয়া সিনওয়ারের জন্ম দিতে পারে, যারা ভবিষ্যতে প্রতিরোধ আন্দোলনের নতুন নেতৃত্বে পরিণত হতে পারেন।

অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপ ও বন্দিমুক্তি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের সময় ইসরায়েল বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তিতে আপত্তি জানায়। তবে শেষ পর্যন্ত, এমন কয়েকজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন যাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ছিল এবং তাঁরা বহু বছর ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন।

তেলআবিবে ভয়—‘আরেক সিনওয়ার’ জন্ম নিতে পারে
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা হিব্রু দৈনিক হা’আরেত্জ (Haaretz)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা এমন মানুষদের মুক্তি দিচ্ছি, যারা হয়তো আরেকজন ইয়াহইয়া সিনওয়ারে পরিণত হতে পারে।”

এই মন্তব্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়, কারণ মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেকে গাজার সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা ও প্রভাব অর্জন করে প্রতিরোধ আন্দোলনে পুনরায় সক্রিয় হতে পারেন।

ইয়াহইয়া সিনওয়ার: বন্দি থেকে প্রতিরোধের প্রতীক
উল্লেখ্য, শহীদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ও “আল-আকসা ঝড়” অভিযানের (Operation Al-Aqsa Flood) প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং ২০১১ সালে এক বন্দি-বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান—যখন হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিত-এর বিনিময়ে ১,০২৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

মুক্তির পর থেকেই সিনওয়ার দ্রুত হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন এবং গাজার সর্বাধিক প্রভাবশালী প্রতিরোধ নেতায় পরিণত হন। তাঁর এই উত্থান এখন ইসরায়েলি নেতৃত্বের কাছে এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে, এবং এজন্যই তারা আশঙ্কা করছে যে সদ্য-মুক্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কেউ হয়তো নতুন “সিনওয়ার” হয়ে উঠতে পারেন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তার সতর্কতা
ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা আরও বলেন, “এই ব্যক্তিরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিপজ্জনক! আমাদের জানতে হবে—তারা কারা, তাদের পটভূমি কী, এবং তারা মুক্তি পাওয়ার পর কী করতে পারে।”

এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও ভয়াবহ ঝুঁকি হিসেবে দেখছে।

যেসব নেতার মুক্তিতে ইসরায়েলের আপত্তি
ইসরায়েল বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি নেতার মুক্তিতে কঠোর আপত্তি জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে—
• মারওয়ান বারঘুতি (Marwan Barghouti)– ফাতাহ আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতা, যিনি পশ্চিম তীরে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ফিলিস্তিনির কাছে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচিত।
• আবদুল্লাহ বারঘুতি (Abdullah Barghouti) – হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রাক্তন কমান্ডার, যিনি ইসরায়েলের মতে একাধিক প্রতিরোধ অভিযানে ভূমিকা রেখেছেন।
• আহমদ সা’দাত (Ahmad Sa’adat) – পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (PFLP)-এর মহাসচিব।
• হাসান সালামা (Hassan Salameh) – হামাসের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারদের একজন।
• ইব্রাহিম হামেদ (Ibrahim Hamed) – হামাসের প্রাক্তন আঞ্চলিক কমান্ডার, যাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েল অসংখ্য অভিযোগ এনেছে।
• ইয়াদ আবু রুব (Eyad Abu Rub) – ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে সক্রিয় এক প্রবীণ নেতা।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, এই ব্যক্তিদের মুক্তি গাজা ও পশ্চিম তীরে নতুন প্রতিরোধ আন্দোলনের পুনর্জাগরণ ঘটাতে পারে, যা তাদের কাছে এক ‘নিরাপত্তা দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে বিবেচিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha