বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:২১
ইউনেস্কো: মসজিদুল আকসা ঐতিহাসিকভাবে সম্পূর্ণরুপে মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পদ

২০১৬ সালে ইউনেস্কো গৃহীত এক প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়, মসজিদুল আল-আকসা ইসলামের পবিত্র স্থান এবং এর মালিকানা ও ধর্মীয় অধিকার কেবল মুসলমানদের।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর (ফার্সি তারিখ অনুযায়ী ২২ মেহর), ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের “প্রোগ্রাম ও বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি” এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়— “মসজিদুল আকসা ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান, এবং এটি মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তি।”

উক্ত প্রস্তাবে মসজিদুল আল-আকসার সঙ্গে কোনো ইহুদি ঐতিহাসিক সম্পর্কের উল্লেখ করা হয়নি। বরং এতে ইসরাইলি সেনা ও চরমপন্থী জায়নিস্ট গোষ্ঠীর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

ইসলামী দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাব অনুমোদন
এই প্রস্তাবটি পেশ করে আলজেরিয়া, মিশর, লেবানন, মরক্কো, ওমান, কাতার ও সুদান।
প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (OIC), আল-আজহার অবজারভেটরি, ইরাকের মুসলিম আলেম পরিষদ, ফিলিস্তিনি সরকার ও বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলন এটিকে স্বাগত জানায় এবং এটিকে মুসলিম বিশ্বের এক ঐক্যবদ্ধ অবস্থান হিসেবে আখ্যায়িত করে।

ইসরাইলের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিধ্বনি
অন্যদিকে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, তেলআবিব সরকার প্রস্তাবের ভাষা পরিবর্তন ও প্রভাব হ্রাসের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায়। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত আসলে একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যা নিশ্চিত করে যে জেরুসালেম (আল-কুদস) দখলকৃত ভূখণ্ড, এবং এ বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে সামনে আসে।

মসজিদুল আল-আকসা: ইসলামের প্রথম কিবলা ও পবিত্র তীর্থস্থান
মসজিদুল আল-আকসা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ এবং ইসলামের তিনটি মহান মসজিদের একটি—যেখানে নবী মুহাম্মদ ﷺ নামাজ আদায়ের সুপারিশ করেছেন। এটি মুসলমানদের প্রথম কিবলা এবং ইসলামের ইতিহাসে একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। মসজিদটি অবস্থিত ফিলিস্তিনের জেরুসালেমের পুরনো শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে। “মসজিদুল আল-আকসা” শব্দটি শুধু একটি মসজিদ নয়, বরং পুরো পবিত্র এলাকা ও প্রাচীরঘেরা প্রাঙ্গণকে বোঝায়।

অবস্থান, স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মসজিদুল আকসার আয়তন প্রায় ১,৪৪,০০০ বর্গমিটার। এর অভ্যন্তরে রয়েছে—

•কুব্বাতুস সাখরা (পাথরের গম্বুজ)

•মসজিদুল কিবলি

•মারওয়ানি নামাজঘর

•বাবুর রাহমা নামাজঘর
এ ছাড়া প্রায় ২০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন রয়েছে। মসজিদটি একটি ছোট পাহাড়ের ওপর অবস্থিত, যা “মোরিয়া পর্বত” নামে পরিচিত। এর কেন্দ্রস্থলে বিখ্যাত শিলা (সাখরা) অবস্থিত—যা ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষ পবিত্রতা লাভ করেছে।

কুরআনের দৃষ্টিতে মসজিদুল আল-আকসা
কুরআনে মসজিদুল আকসার উল্লেখ রয়েছে সূরা ইসরা’র প্রথম আয়াতে— “পবিত্র সেই সত্তা, যিনি এক রাতে তাঁর বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যার চারপাশকে আমরা বরকতময় করেছি, যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা ইসরা, আয়াত ১) এই আয়াত প্রমাণ করে যে মসজিদুল আল-আকসা ইসলামী ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ইহুদি বিশ্বাস ও বর্তমান বিতর্ক
ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও এই স্থানকে পবিত্র মনে করে এবং এর প্রাঙ্গণকে “টেম্পল মাউন্ট (কোহ হার হাবাইত)” নামে অভিহিত করে, যা তারা নবী সোলায়মান (আ.)-এর মন্দিরের অবস্থান বলে বিশ্বাস করে। তবে বহু ইহুদি সংগঠন এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে নিজেদের ধর্মীয় মন্দির পুনর্নির্মাণের দাবি তুলছে—যা মুসলমানদের কাছে এক ধরনের ধর্মীয় উসকানি ও রাজনৈতিক আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত।

ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের এই প্রস্তাব মুসলিম বিশ্বের জন্য এক ঐতিহাসিক দলিল, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে— মসজিদুল আল-আকসা কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, আত্মিক উত্তরাধিকার ও পবিত্র সম্পদ। এটি কেবল একটি স্থাপনা নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha