হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ মোহসেন আরাকি কোমের প্রাদেশিক প্রচার বিভাগের সহকারী, জেলা-স্তরের প্রচার কর্মকর্তারা এবং আমীন মাদ্রাসাগুলোর সমন্বয়কারীদের এক সভায় এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
তার ভাষণের মূল বিষয়সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. শার্ম-আল-শেখ সম্মেলন: অপমানের দৃশ্য
আয়াতুল্লাহ আরাকী বলেন, শার্ম-আল-শেখ সম্মেলনটি ছিল এমন একটি স্পষ্ট দৃশ্য যেখানে কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতারা ট্রাম্পের সামনে অপমানিত হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই নেতারা বাস্তবে ইসরায়েল ও আমেরিকার স্বার্থসেবায় নিয়োজিত, অথচ সম্মেলনে নিজেদের মর্যাদা বজায় রাখতে পারেননি। বিশেষ করে মিসরের রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি দীর্ঘদিন প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করতে চেষ্টা করেছেন, ট্রাম্পের সামনে কোনো সম্মানজনক অবস্থান পায়নি এবং অপমানিত হয়েছেন। এছাড়া, ইরান সম্মেলনে অংশ না নেওয়ায় সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে, যা তাদের ঈমান এবং স্বাধীনতার পরিচায়ক।
২. শত্রুর সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র: মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ
আয়াতুলল্লাহ আরাকী বলেন, শত্রুদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হলো মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। সামরিক ময়দানে শত্রু পরাজিত হলেও, সমস্যার মূল কারণ হলো শত্রুর আগেভাগে প্রচারিত মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব—ভয় সৃষ্টি, সন্দেহ জাগানো, মানুষের ইচ্ছাশক্তি দুর্বলকরণ এবং হতাশা সৃষ্টির মাধ্যমে। তাই প্রচারের ময়দানে আমাদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং জনগণকে দৃঢ়তা প্রদানে সক্ষম করা।
৩. তরুণ প্রজন্মকে বিপ্লবের সাফল্য বোঝানো জরুরি
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অবশ্যই ইসলামী বিপ্লবের অর্জন, সফলতা ও ইতিহাস তরুণদের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তরুণরা বুঝতে পারবে কেন শত্রু এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে। শত্রুতার মূল কারণগুলো ব্যাখ্যা করলে নতুন প্রজন্মের ঈমান ও বাসিরাত (সচেতনতা) বৃদ্ধি পাবে।
৪. ইমান: শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উৎস
আয়াতুল্লাহ আরাকী বলেন, ইমানই একটি জাতির শক্তি। যারা ইমান রাখে, তারা শত্রুর সামনে ভয় পায় না এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বিজয়ী হয়। তিনি কোরআনের এই আয়াত উদ্ধৃত করেন,
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِینَ
দুস্ত বা দুশ্চিন্তা বশ্যীতন্বিত হইও না; যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমরাই শ্রেষ্ঠ।
আয়াতুল্লাহ আরাকী বলেন, ইমানই সেই শক্তি যা সমাজকে প্রতিরোধযোগ্য করে তোলে এবং বিজয়ী করে।
৫. প্রাক ইসলামের যুদ্ধ: আজকের প্রতিরোধের পাঠশালা
তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.) ও আমিরুল-মুমিনিন (আ.)-এর যুদ্ধসমূহ—যেমন খাইবার এবং আহজাব—তরুণদের কাছে শুধুই ইতিহাস হিসেবে নয়, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার পাঠ হিসেবে তুলে ধরার ওপর জোর দিয়েছেন। এই যুদ্ধগুলি কেবল সামরিক সংঘর্ষ ছিল না; এগুলো ছিল বিশ্বাস, সাহস এবং কৌশলের স্কুল, যা আজকের মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা দেয়।
আয়াতুল্লাহ আরাকী হাদিসের মাধ্যমে স্মরণ করিয়েছেন,
من کان یؤمن بالله واليوم الآخر فلیقل خیرًا او لیصمت
যিনি আল্লাহ ও অখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী, তিনি ভালো কথা বলুক বা নীরব থাকুক।
এই নীতি আজকের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রচারে তরুণদের জন্য প্রাসঙ্গিক শিক্ষা দেয়।
৬. সবকিছু ‘খোদার জন্য’: প্রচারের সফলতার মূল
আয়াতুল্লাহ আরাকী বলেন, প্রচার ও সাংস্কৃতিক কাজ তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন তা খোদার উদ্দেশ্যে এবং নিখুঁত নিয়ত নিয়ে সম্পন্ন করা হয়। প্রচারকর্মকে অবশ্যই বিশ্বাস, নিশ্চিত দৃঢ়তা এবং নেতৃত্বের আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে।
৭. নিশ্চিত বিশ্বাস ও নেতৃত্বের আনুগত্য: মাকতাবীয় আন্দোলনের ভিত্তি
তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কর্মের ভিত্তি হতে হবে ঈমান এবং নেতৃত্বের আনুগত্য। যদি আমরা এই ভিত্তি ধরে থাকি, শত্রু আমাদের মনস্তাত্ত্বিক আক্রমণে পরাজিত করতে পারবে না।
৮. সাংস্কৃতিক প্রচার: তরুণদের প্রস্তুত করা
শেষে তিনি ধর্ম প্রচারকারী মুবাল্লেগ ও সাংস্কৃতিক কার্যনির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানান, পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্মসূচি গ্রহণ করে তরুণ প্রজন্মকে বিপ্লবের মূল্যবোধ, ইসলামের ইতিহাস এবং জাতীয় সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করুন। যাতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রটি শত্রুর মনস্তাত্ত্বিক আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি শক্তপোক্ত দুর্গে পরিণত হয়।
আপনার কমেন্ট