শুক্রবার ১৭ অক্টোবর ২০২৫ - ২০:২১
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপোষ মানে লজ্জা, অবমাননা ও নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের জুমার ইমাম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ সাঈদি বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য শান্তি বা আপোষ নয়, বরং লজ্জা, অবমাননা এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, যা শার্ম আল-শেখে এবং ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ সাঈদী বলেন, শক্তিশালী ইরান শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং শক্তিশালী, সমন্বিত অর্থনীতির মাধ্যমে সম্ভব, যা অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা, দক্ষ মানবসম্পদ এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সংযোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা সম্ভব। আজকের বিশ্বে কোনো দেশের শক্তি তার প্রাকৃতিক সম্পদ বা সামরিক সক্ষমতার চেয়ে বেশি নির্ভর করে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর। শক্তিশালী অর্থনীতি কেবল জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তি নয়, বরং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, মানুষের জীবনমান, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির উৎস।

আয়াতুল্লাহ সাঈদি বলেন, মজবুত অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সরকারী তত্ত্বাবধান, উৎপাদনশীল ব্যক্তিগত খাত, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থা এবং স্থায়ী অর্থনৈতিক নীতি অপরিহার্য। এই অর্থনীতি শত্রুর হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হবে এবং শক্তিশালী ইরান গড়ে তুলবে।

তিনি ট্রাম্পের প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বার্জাম (পরমাণু চুক্তি) থেকে বের হওয়াকে নিজের সাফল্য মনে করেছেন, তারপরও কৌশলীভাবে শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি ইসরাইলকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য উস্কিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে আপোষ বা শান্তি মানে হলো আত্মসমর্পণ ও লজ্জা, যা শার্ম আল-শেখ এবং ইসরাইলের লঙ্ঘনের মাধ্যমে প্রমাণিত।

তিনি আরও বলেন, ইরানের জাতি কোনো শক্তির সামনে নতজানু হবে না, বরং শত্রুকে প্রতিহত করার দৃঢ় সংকল্প রাখে।

শালীন জীবন যাপন একটি সামাজিক কর্তব্য
আয়াতুল্লাহ সাঈদি বলেন, শালীন জীবন যাপন আল্লাহ প্রদত্ত এবং সকলের জন্য সামাজিক দায়িত্ব, যা কোনো বিশেষ লিঙ্গ বা গোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের সকল ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করে।

তিনি বলেন, যারা ধর্মীয়, নৈতিক সীমা মেনে সমাজে প্রবেশ করে এবং যথাযথ পোশাক পরিধান করে, তারা সমাজের প্রতি একটি বড় সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। কুরআন (সূরা নিসা, আয়াত ২৭) এই নৈতিক জীবন যাপনের গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বস্ত সমাজকে শয়তানের যেকোনো প্রলুব্ধি থেকে রক্ষা করতে শালীনতা অপরিহার্য। এটি শুধু শাস্ত্রীয় আদেশ নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বরকত এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।

শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার এবং গাজার প্রতিরোধ
আয়াতুল্লাহ সাঈদি শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি সাহস ও ঈমান দিয়ে সব ইসরায়েলি ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করেছেন। তার সাথে থাকা তাসবীহ শিক্ষণীয় বার্তা বহন করেছিল যে, শুধুমাত্র আহলে বাইতের পথই সঠিক পথ।

তিনি বলেন, আজকের ক্রীড়া ক্ষেত্রও শক্তির বিরুদ্ধে একটি রণভূমি।

সূরা ফাতহ: একটি মহান বিজয়ের বার্তা
আয়াতুল্লাহ সাঈদি সূরা ফাতাহের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “إِنَّا فَتَحْنَا لَکَ فَتْحًا مُبِینًا” (আমরা তোমার জন্য সুস্পষ্ট বিজয় আনলাম) সূরার প্রথম আয়াত। এটি হুদাইবিয়াহ চুক্তির প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে এবং ইসলামিক শত্রুদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও চূড়ান্ত বিজয়ের বার্তা।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, হুদাইবিয়াহ চুক্তি মুসলিমদের জন্য ছোট বিপর্যয় মনে হলেও পরবর্তীতে এটি মক্কার বিজয়ের পথে সহায়ক হয়েছে। আজও গাজার পরিস্থিতি অনুরূপ, যেখানে হামাসের প্রতিরোধ বিশ্বকে শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে।

সূরা ফাতহের সাতটি মূল বিষয়

১. বিজয়ের খুশির বার্তা ও নবীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন

২. হুদাইবিয়াহ চুক্তি ও মুমিনদের শান্তি ও তৃপ্তি

৩. নবী ﷺ-এর মর্যাদা ও মানুষের রক্ষা ও সুখের উদ্দেশ্য

৪. মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ও বাধা

৫. মুনাফিকদের অবৈধ দাবি ও অতিরিক্ত প্রত্যাশা

৬. জিহাদের গুরুত্ব

৭. নবীর প্রকৃত অনুসারীদের গুণাবলী

আয়াতুল্লাহ সাঈদি বলেন, সূরা ফাতাহ মুমিনদের আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা, ঈমানের শক্তি এবং সমস্যা মোকাবিলায় স্থিতিশীলতা প্রদান করে। এটি শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং বিজয়ের আত্মবিশ্বাসের উৎস।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha