হাওজা নিউজ এজেন্সি: এই লেখায় আমরা তাঁর দেওয়া পাঁচটি অপূর্ব উপদেশ তুলে ধরবো, যা একজন মুমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোকিত দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।
আমিরুল মু'মিনিন ইমাম আলী (আ.) বলেন,
أُوصِيكُمْ بِخَمْسٍ، لَوْ ضَرَبْتُمْ إِلَيْهَا آبَاطَ الْإِبِلِ لَكَانَتْ لِذٰلِكَ أَهْلًا:
“আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি; যদি তোমরা এগুলোর জন্য কঠিন পরিশ্রমও করো, তবুও তা সার্থক:
১. কেবল আল্লাহরই উপর আশা রাখো
لَا تَرْجُ إِلَّا رَبَّكَ
“তুমি তোমার আশা শুধু আল্লাহর কাছেই রাখো।”
মানুষের জীবনে আশা অপরিহার্য, কিন্তু প্রকৃত মুমিন জানে— আশার উৎস আল্লাহ ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।
যে যুবক নিজের ভবিষ্যৎ, রিযিক, সুখ বা সফলতা মানুষের হাতে খোঁজে, সে একদিন নিরাশ হয়। কিন্তু যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ কখনোই তাকে নিরাশ করেন না।
২. নিজের গুনাহ ছাড়া আর কিছু থেকে ভয় পেও না
وَلَا تَخَفْ إِلَّا ذَنْبَكَ
“নিজের গুনাহ ছাড়া অন্য কিছু থেকে ভয় করো না।”
মানুষ প্রায়শই দুনিয়ার বিপদ, দারিদ্র্য, বা মানুষের দৃষ্টিকে ভয় পায়। কিন্তু ইমাম আলী (আ.) শিক্ষা দিচ্ছেন—সবচেয়ে বড় ভয় হওয়া উচিত নিজের গুনাহের ভয়। কারণ গুনাহই মানুষের অন্তরকে কালো করে দেয়, রিযিক কমিয়ে দেয়,
এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
৩. না জানলে “আমি জানি না” বলতে লজ্জা পেয়ো না
وَلَا تَسْتَحْيِ أَنْ تَقُولَ لَا أَعْلَمُ
“তুমি ‘আমি জানি না’ বলতে লজ্জা পেয়ো না।”
জ্ঞানের প্রথম ধাপ হলো অজ্ঞতা স্বীকার করা। যে মানুষ নিজের না জানাকে স্বীকার করে, সে-ই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে যায়।
কিন্তু যে লজ্জা পেয়ে মিথ্যা জ্ঞান দেখায়, সে নিজের অজ্ঞতাকে আরও গভীর করে।
৪. না জানলে শেখার ব্যাপারে কখনো সংকোচ করো না
وَلَا تَسْتَحْيِ فِي تَعَلُّمِ مَا لَا تَعْلَمُ
“যা জানো না, তা শেখার ব্যাপারে লজ্জা পেয়ো না।”
ইমাম আলী (আ.) তরুণদের শিখিয়েছেন— শিক্ষা ও জ্ঞানলাভে কখনো অহংকার বা লজ্জা থাকা উচিত নয়।
জ্ঞান অর্জনই আত্মিক উন্নতির মূল।
যে যুবক শেখার জন্য আগ্রহী, আল্লাহ তার অন্তরে আলো ও প্রজ্ঞা দান করেন।
৫. ধৈর্য ধারণ করো— কারণ ধৈর্য হলো ঈমানের মাথা
وَاصْبِرْ، فَإِنَّ الصَّبْرَ مِنَ الْإِيمَانِ كَالرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ، وَلَا خَيْرَ فِي جَسَدٍ لَا رَأْسَ مَعَهُ، وَلَا فِي إِيمَانٍ لَا صَبْرَ مَعَهُ
“ধৈর্য ধারণ করো, কারণ ধৈর্য ঈমানের সঙ্গে সেই সম্পর্ক রাখে, যেমন মাথা শরীরের সঙ্গে। মাথাবিহীন দেহের কোনো উপকার নেই, যেমন ধৈর্যহীন ঈমানেরও কোনো মূল্য নেই।”
ধৈর্যই মুমিনের শক্তি। যে যুবক কষ্ট, ব্যর্থতা ও বিপদের সময় ধৈর্য ধরে, আল্লাহ তার জন্য এমন দরজা খুলে দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। ধৈর্যই মানুষকে দৃঢ়, সাহসী ও সফল করে।
ইমাম আলী (আ.)-এর এই পাঁচটি উপদেশ আসলে মানবজীবনের পাঁচটি স্তম্ভ।
এগুলো কেবল ধর্মীয় পরামর্শ নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক দর্শন।
১️. আল্লাহর প্রতি ভরসা — আত্মার প্রশান্তি।
২️. গুনাহের ভয়— আত্মশুদ্ধির পথ।
৩️. ‘আমি জানি না’ বলার সাহস— জ্ঞানের সূচনা।
৪️. শেখার আগ্রহ— অগ্রগতির শক্তি।
৫️. ধৈর্য— ঈমানের প্রাণশক্তি।
যে যুবক এই পাঁচটি উপদেশকে জীবনের নীতি বানায়, সে দুনিয়ায় মর্যাদা ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
উৎস: নাহজুল বালাগা, সুবহে সালেহ্, ৪৮২ নম্বর পৃষ্ঠা।
সারাংশ: “যে যুবক আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, গুনাহ থেকে ভয় পায়, জ্ঞান অর্জনে লজ্জা পেয়ো না, এবং ধৈর্যের পথ ধরে— সে-ই প্রকৃত মুমিন।”
আপনার কমেন্ট