হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম মেহদী মান্দেগারি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে নবীজি (সা.) যুবকদের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য স্বীকৃতি দিয়ে, তাদের সঠিক পথে রূপান্তরিত করে এবং অনুচিত অভ্যাস ধীরে ধীরে দূরীকরণ করতেন। এই শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান সমাজে যুবকদের নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
যুব সমাজের সঙ্গে সহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মাদ মেহদী মান্দেগারি প্রথম শিক্ষামূলক সেশন “পাসোখে শুবহাত সিরাতে রাসুলে আকরম (সা.)”–এ নবীজির যুব সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম ধাপ হলো তার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা ও স্বীকৃতি দেওয়া।
বয়স অনুসারে সম্পর্কের পদ্ধতি
সুরা হাদিদ, আয়াত ২০–এর আলোকে তিনি ব্যাখ্যা করেন,
اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَیَاةُ الدُّنْیَا لَعِبٌ وَ لَهْوٌ وَ زِینَةٌ وَ تَفَاخُرٌ بَیْنَکُمْ وَ تَکَاثُرٌ فِی الْأَمْوَالِ وَ الْأَوْلَادِ।
এই আয়াত অনুযায়ী বিভিন্ন বয়সের মানুষের আকর্ষণ ও প্রয়োজন আলাদা। শিশু বয়সে খেলাধুলা, যৌবনে সৌন্দর্য ও প্রশংসা, মধ্যবয়সে গর্ব ও প্রাপ্তি, বয়সোত্তর পর্যায়ে সম্পদ ও সন্তানদের প্রাপ্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (সা.) এই আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলেন।
তিনটি মূল স্তম্ভ: স্বীকৃতি, রূপান্তর ও দূরীকরণ
যুব সমাজের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নবীজির (সা.) তিনটি মূল নীতি—স্বীকৃতি, রূপান্তর ও অনুচিত বৈশিষ্ট্য দূরীকরণ—প্রয়োগ করা হতো। যুবকরা সম্মান, প্রশংসা ও জ্ঞানলব্ধি চায়। প্রথমে ইতিবাচক গুণাবলী স্বীকৃতি দিয়ে, পরে সেগুলোকে সঠিক পথে রূপান্তরিত করতে হয়।
যুবক প্রশংসা ও সম্মানের তৃষ্ণা রাখে
হুজ্জাতুল ইসলাম মান্দেগারি বলেন, যুবকের সঙ্গে সম্পর্কের প্রথম ধাপ হলো তার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রশংসা করা। নবীজি (সা.) যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগে সর্বদা এই পদ্ধতি অবলম্বন করতেন।
দুই উৎস থেকে যুবকের প্রয়োজন পূরণ
যুবকের প্রয়োজন দুটি উৎস থেকে পূরণ হতে পারে। একটিতে সত্যনিষ্ঠভাবে প্রয়োজন মেটানো হয়, অন্যটিতে ভ্রান্ত প্রতিশ্রুতি ও মিথ্যা দিয়ে প্রলোভন সৃষ্টি করা হয়। নবীজি (সা.) প্রথম উৎস ব্যবহার করে যুবকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলেন।
অপছন্দনীয় বৈশিষ্ট্য দূরীকরণ
স্বীকৃতি ও রূপান্তরের পর যুবকদের অনুচিত অভ্যাস দূরীকরণ করা প্রয়োজন। এটি ধাপে ধাপে, সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কন্যা সন্তানকে জীবিত দাফন করা নবীজি সরাসরি নিষিদ্ধ করেছিলেন, আর মদ্যপান প্রতিরোধে ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছিল।
নবীজির (সা.) উদাহরণ ও হাদীস
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যেখানে থাকো, আল্লাহকে ভয় করো (তাকওয়া অবলম্বন করো), খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো— তা খারাপ কাজ মুছে দেবে, এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।”
এছাড়া ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, “তাকওয়া হচ্ছে সমস্ত উত্তম চরিত্রের শিরোমণি।” এবং “পরহেজগারগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত।”
সুন্দর, প্রাঞ্জল ও বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ পদ্ধতি
নবীজির (সা.) পদ্ধতি যুব সমাজের জন্য সুন্দর, বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য। বর্তমান শিক্ষাবিদ ও আলেমদেরও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে যুব সমাজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
সীমিত স্বাধীনতা ও বাস্তবতা
হুজ্জাতুল ইসলাম মান্দেগারি বলেন, মানুষের জন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা সম্ভব নয়, কারণ মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনের অধিকারী। যুবকদের প্রয়োজন পূরণে বিশ্বস্ত উৎস বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহর প্রতি প্রগাঢ় আনুগত্যই প্রকৃত স্বাধীনতা
তিনি আরও বলেন, যারা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে, তারা প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে। উদাহরণস্বরূপ, শহীদ হাজ্ব কাসেম কোনো সময় আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাননি।
শয়তান ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
শয়তান সুন্দরভাবে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে তা ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ, হযরত আদম (আ.) শয়তানের কৌশলে বিভ্রান্ত হন। আজও শয়তান মানুষের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে থাকে।
শয়তানের ছদ্মবেশ
শয়তান সবসময় সুন্দর আড়ালে ভীতিকর উদ্দেশ্য লুকায়। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক প্রলোভনে ভ্রান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া তার উদাহরণ।
হুজ্জাতুল ইসলাম মান্দেগারি মনে করান, পরিপূর্ণ স্বাধীনতা কল্পনার মাত্র। প্রকৃত স্বাধীনতা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে নিহিত। যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে স্বীকৃতি, রূপান্তর ও দূরীকরণের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে তারা সত্যিকারের নৈতিকতা ও মুক্তি অর্জন করতে পারে।
আপনার কমেন্ট