বুধবার ২৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৮:৫০
আশার মোহ থেকে মুক্তি: ইমাম আলীর (আ.) দৃষ্টিতে প্রকৃত নিঃস্বার্থতা

মানুষের অন্তহীন আকাঙ্ক্ষা ও দুরাশা—যা তাকে অস্থির করে তোলে, অন্যের মুখাপেক্ষী করে তোলে, এবং আত্মিক প্রশান্তি কেড়ে নেয়—সেই মোহ থেকে মুক্তিই প্রকৃত স্বাধীনতা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম আলী (আ.) তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বাণীতে আমাদের শেখান, প্রকৃত ধনবান সেই, যে নিজের অন্তরের অতৃপ্ত বাসনাকে সংযত করতে পারে।

ইমাম আলী (আ.) বলেন,

 أَشْرَفُ الْغِنَی، تَرْکُ الْمُنَی

সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো—আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ।[নাহজুল বালাগ হিকমত,১০]

এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর বাণীতে ইমাম (আ.) আমাদের জীবনের এক মৌলিক সত্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। “মুনি” শব্দটি এসেছে “উমনিয়া” থেকে, যার অর্থ—আশা, আকাঙ্ক্ষা, দুরাশা। এখানে ইমাম (আ.) যে আকাঙ্ক্ষার কথা বলছেন, তা বাস্তবতা ও যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া, এমন বাসনা যা মানুষকে অস্থির, নির্ভরশীল ও আত্মিকভাবে দরিদ্র করে তোলে।

এই ধরনের দুরাশা মানুষকে নিজের সামর্থ্যের বাইরে কিছু পাওয়ার জন্য অন্যের দ্বারে যেতে বাধ্য করে—সে যত বড় বা ছোট হোক না কেন। এতে মানুষের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এবং প্রকৃত স্বাধীনতা হারিয়ে যায়।

এছাড়া, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য মানুষ নিজের সম্পদ জমিয়ে রাখে, ব্যয় করতে কুণ্ঠিত হয়, এবং বাস্তব জীবনে দরিদ্রের মতো জীবনযাপন করে। সর্বোপরি, এই দুরাশা তার মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক স্থিতি কেড়ে নেয়।

ইমাম আলী (আ.) আরও বলেন: সবচেয়ে উপকারী সম্পদ হলো—আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ। [গুরারুল হিকাম, হাদিস ৭২১৩]

এই আকাঙ্ক্ষাগুলোই মানুষের অন্তরের দাসত্বের মূল। যখন এই বাসনাগুলো মন থেকে মুছে যায়, তখনই মানুষ প্রকৃত নিঃস্বার্থতা ও আত্মমর্যাদার স্বাদ পায়।

আরেকটি বাণীতে ইমাম (আ.) বলেন, “কোনো ধনভাণ্ডারই সন্তুষ্টির চেয়ে বেশি সম্পদশালী নয়।” [নাহজুল বালাগা হিকমত,৩৭১]

এখানে ‘সন্তুষ্টি’ বলতে সেই মানসিক অবস্থা বোঝানো হয়েছে, যেখানে মানুষ নিজের বর্তমান অবস্থা ও প্রাপ্তিকে যথেষ্ট মনে করে—যা দুরাশার বিপরীত।

ইমাম হাদি (আ.)-এর একটি বাণীও এই শিক্ষাকে সমর্থন করে, “সম্পদ হলো—আকাঙ্ক্ষার সীমিতকরণ এবং যা তোমার প্রয়োজন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। আর দারিদ্র্য হলো—অতৃপ্ত আত্মা ও গভীর হতাশা।” [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৫, পৃষ্ঠা ৩৬৮]

পদটীকা:

১) গুরারুল হিকাম, হাদিস নং ৭২১৩।
(২) বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৫, পৃষ্ঠা ৩৬৮, হাদিস নং ৩।
(৩) উক্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণীর সূত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে— মাসাদিরে নাহজুল বালাগা গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, এই অমূল্য বাণীটি “খুতবা-য়ে ওসিলা” নামে একটি বিখ্যাত খুতবার অংশ। বহু আলেম সাইয়্যেদ রাযির আগেও এই খুতবাটি উল্লেখ করেছেন (যদিও এটি নাহজুল বালাগায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি)।

এর মধ্যে তুহাফুল উকুল গ্রন্থের লেখক পুরো খুতবাটি বর্ণনা করেছেন, যেখানে আলোচ্য বাক্যটি ঠিক এইরূপেই এসেছে।

তদ্রূপ, মরহুম আল–কুলায়নি (রহঃ) সাইয়্যেদ রাযির পূর্বেই এটি রাওজাতুল কাফি গ্রন্থে সংরক্ষণ করেছেন। পরে বহু আলেম এ খুতবাটি উদ্ধৃত করেছেন, যদিও এখানে তাদের নাম উল্লেখের প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া, মরহুম শায়খ সাদুকও তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহ (খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)-এ উক্ত অংশটি স্থান দিয়েছেন।

অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. ফারুক হুসাইন

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha