হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের হামেদান প্রদেশের মুবাল্লিগদের এক সমাবেশ হযরত আবুযার (রা.) সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক ক্যাম্পের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন হাওজায়ে ইলমিয়ার সর্বোচ্চ পরিষদের দ্বিতীয় সচিব আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ মারভি।
তাবলীগ: ইসলামের স্থিতি ও প্রসারের মূলভিত্তি
সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে আয়াতুল্লাহ মারভি বলেন, “ইসলাম এমন এক চিরস্থায়ী ধর্ম, যা তাবলীগের মাধ্যমে শুরু হয়েছে, তাবলীগের মাধ্যমে টিকে আছে এবং তাবলীগপর মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।”
তিনি মুবাল্লিগদের উপস্থিতিকে এক মহান সৌভাগ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি আমাকে এমন মানুষদের মাঝে উপস্থিতির তাওফিক দিয়েছেন, যারা কথা ও কর্ম উভয়ের মাধ্যমে আহলে বাইত (আ.) ও ইসলামী বিপ্লবের বার্তা মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেন।”
“তাবলীগই ধর্মের তাবুর স্তম্ভ”
হাওজায়ে ইলমিয়ার সর্বোচ্চ পরিষদের দ্বিতীয় সচিব জোর দিয়ে বলেন, “ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা প্রারম্ভকাল থেকেই তাবলীগ কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল, এবং আজও ইসলাম কেবল তাবলীগ ও প্রচারের মাধ্যমেই প্রাণবন্ত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, বিশিষ্ট শিয়া আলেমদের দৃষ্টিতে তাবলীগ এক মহৎ দায়িত্ব। তাবলীগ ও প্রচারের মাধ্যমেই তাশায়্যু (শিয়া মাজহাব) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত হয়েছে এবং আজ আমরা আহলে বাইত (আ.)-এর প্রেমে উদ্বেল মানুষের উপস্থিতি পৃথিবীর সর্বত্র প্রত্যক্ষ করছি।
“তাবলীগ—সব দাওয়াতি প্রয়াসের চূড়ান্ত লক্ষ্য”
আয়াতুল্লাহ মারভি ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ির বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, “নবীদের প্রেরণ, জিহাদ, সংগ্রাম ও শাহাদাত—সবকিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আল্লাহর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। অর্থাৎ, তাবলীগ ও প্রচারই ধর্মীয় সংগ্রামের পরিণত গন্তব্য।”
বিশ্বব্যাপী আহলে বাইতের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি
তিনি বলেন, “আজ সারা বিশ্বে আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি অনুরাগ ও আগ্রহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শত্রুপক্ষের নেতিবাচক প্রচারণা আপনাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারবে না। বর্তমানে ন্যায়বিচার, সত্যের অনুসন্ধান ও ইসলামী বিপ্লবের আহ্বান বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।”
হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিন ও সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি যোগ করেন, “এই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েই তাশায়্যু ধারার প্রতি আগ্রহ আরও গভীর ও বিস্তৃত হয়েছে।”
সফল দাওয়াতের শর্ত: জ্ঞান, প্রস্তুতি ও আত্মিকতা
মুবাল্লিগদের উদ্দেশে আয়াতুল্লাহ মারভি বলেন, “তাবকীগ ও প্রচারে সফলতার প্রধান শর্ত হলো অধ্যয়ন ও বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতি। একজন মুবাল্লিগকে জ্ঞান, চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতায় সমৃদ্ধ হতে হবে, যাতে তিনি মানুষের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।”
তিনি নাহজুল বালাগা ও সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়া-কে শিয়াত্বের দুটি অনন্য সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “কুরআনুল কারিমের পর এই দুই গ্রন্থই মানব হৃদয় জয় করার ক্ষমতা রাখে। প্রশ্ন হলো—আমরা নিজেরা এই গ্রন্থগুলোর সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত? এবং আমাদের শ্রোতাদের আমরা কতটা এই উৎসগুলোর সঙ্গে পরিচিত করতে পেরেছি?”
আপনার কমেন্ট