মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর ২০২৫ - ০৯:১১
হযরত ফাতিমা (সা.)’র মর্যাদা কেবল কুরআন ও আহলে বাইত (আ.)-এর আলোতেই উপলব্ধি করা সম্ভব

আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদি আমুলি (দা.বা.) বলেছেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) “মারেফাতের মহাগুরু” এবং এমন এক অতুলনীয় সত্তা, যার তুলনা ইতিহাসের কোনো নারীর সঙ্গে করা যায় না। তাঁর প্রকৃত মর্যাদা ও অবস্থান কেবল কুরআনের গভীর তত্ত্ব এবং আহলে বাইত (আ.)-এর বাণীর আলোকেই বোঝা সম্ভব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:  আইয়্যামে ফাতিমিয়্যা (হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহার শাহাদাতবার্ষিকী) উপলক্ষে কোমের মসজিদে আযমে আয়োজিত নিজ ফিকহ ক্লাসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই আলোকপাত  করেন।

আয়াতুল্লাহ আমুলি বলেন, “হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) এমন এক জ্ঞানের উৎস, যিনি সমগ্র মানবতার জন্য ‘উস্তাদে আযমে মারেফাত’ (মারেফাতের মহাগুরু)। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা ইতিহাসের অন্য সব নারীর তুলনায় অতুলনীয়। তাঁর বাস্তব অবস্থান বুঝতে হলে কুরআনের তত্ত্ব ও আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষার আশ্রয় নিতে হয়।”

তিনি মরহুম কুলাইনির আল-কাফি গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে বর্ণিত হযরত আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.)-এর তাওহিদ বিষয়ক এক খুতবার উল্লেখ করেন এবং বলেন— “মরহুম কুলাইনি লিখেছেন, যদি সমস্ত জিন ও মানুষ (নবী-রাসূলগণ ব্যতীত) একত্রিত হয়ে আমিরুল মুমিনিনের এই খুতবা শুনত, তবে তাদের সবার উচিত ছিল সেজদায় পড়ে যাওয়া, কারণ এই খুতবা কুরআনের মতোই অনন্য এবং ওহির উৎস থেকে অনুপ্রাণিত। মানবীয় বুদ্ধি দিয়ে এমন ভাষণ দেওয়া সম্ভব নয়।”

তিনি যোগ করেন, “মোল্লা সাদরা শরহে উসুলে কাফি গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন যে, কুলাইনি (রহ.)-এর এই উক্তি সত্য ও গভীর; তবে বলা উচিত ছিল, এটি কেবল নবী নয়, বরং নবীদের মধ্যেও উলুল আজম নবী ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।”

আয়াতুল্লাহ আমুলি ব্যাখ্যা করেন যে, হযরত আলী (আ.) ঐ খুতবায় ব্যাখ্যা করেছেন “আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ‘লা মিন শাই’”—অর্থাৎ, পূর্ব কোনো পদার্থ থেকে নয়, বরং একেবারে নতুনভাবে। তিনি বলেন, “এই দার্শনিক সত্যটি হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) বহু বছর আগে তাঁর বিখ্যাত খুতবায়ে ফাদাকিয়া-তে প্রকাশ করেছিলেন, যখন বলেছিলেন,
«اِبْتَدَعَ الْاَشْیاءَ لا مِنْ شَیْ‌ءٍ»
— ‘তিনি (আল্লাহ) বস্তুসমূহ সৃষ্টি করেছেন কোনো কিছুর উপর নির্ভর না করেই।’

আয়াতুল্লাহ আমুলি বলেন, “আমিরুল মুমিনিন (আ.) ঐ তাওহিদমূলক খুতবা প্রদান করেন প্রায় পঁচিশ বছর পরে, অথচ সিদ্দিকায়ে কুবরা ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তখনই একই তত্ত্ব ও যুক্তি কুরআনভিত্তিক ভাষায় তুলে ধরেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও কন্যা ফাতিমা (সা.আ.)-এর সামনে বিনয় প্রদর্শন করতেন এবং তাঁকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যেতেন।”

তিনি একটি প্রাচীন ভুল ধারণার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “অনেকে বলত—এই জগৎ সৃষ্ট নয়, কারণ যদি সৃষ্টিকর্তা থাকতেন, তবে তিনি ‘কোনো কিছুর (من شیء)’ থেকে সৃষ্টি করতেন, যার মানে আল্লাহ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা নন। আবার যদি বলা হয়, তিনি ‘কোনো কিছু ছাড়াই (من لا شیء)’ সৃষ্টি করেছেন, সেটিও অসম্ভব, কারণ অস্তিত্বহীনতা থেকে কিছুই তৈরি করা যায় না। ফলে তারা দাবি করত—সৃষ্টি অসম্ভব।”

আয়াতুল্লাহ আমুলি ব্যাখ্যা করেন, “এই যুক্তির উত্তর হযরত আলী (আ.) ঐ খুতবায় দিয়েছেন, কিন্তু ২৫ বছর আগেই হযরত ফাতিমা (সা.) তাঁর খুতবা ফাদাকিয়া-তে একই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন,
«اِبْتَدَعَ الْاَشْیاءَ لا مِنْ شَیْ‌ءٍ»
— ‘আল্লাহ বস্তুসমূহ সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে নয়।’
এখানে ‘من شیء’ (কোনো কিছুর থেকে)-এর বিপরীত ‘لا من شیء’ (কোনো কিছুর উপর নির্ভর না করে), ‘من لا شیء’ (অস্তিত্বহীনতা থেকে) নয়।

তাই যখন বলা হয়, আল্লাহ কিসের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? আমরা বলি—
আল্লাহ لم یخلق من شیء، না من لا شیء — ‘আল্লাহ কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে সৃষ্টি করেননি, কিন্তু অস্তিত্বহীনতা থেকেও নয়।’

বক্তৃতার শেষাংশে আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদি আমুলি (দা.বা.) হযরত সিদ্দিকায়ে তায়্যেবা ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর শাহাদাত উপলক্ষে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং মজলিসে মার্সিয়া পাঠ করেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha