মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫ - ১৫:৪০
আয়াতুল্লাহ আরাফির ভাবনায় শহর ও নাগরিকদের সেবা

আয়াতুল্লাহ আরাফির ভাবনায় শহর ও নাগরিকদের সেবা

 মেয়ররা শুধু অবকাঠামোগত প্রশাসক নন

আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, আন্তরিকতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সেবা ইবাদতের সমান এবং এটি শহরগুলোকে আলোকিত, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশে রূপান্তরিত করতে পারে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মেয়রদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে বলেন যে, উদ্ধার ও উন্নতির পথ নিহিত রয়েছে “ইবাদত” ও “সেবা”-এর সংযোগে। তিনি বলেন, আন্তরিকতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সেবা ইবাদতের সমান এবং এটি শহরগুলোকে আলোকিত, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশে রূপান্তরিত করতে পারে।

এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় হাওজা ইলমিয়ার পরিচালনা দপ্তরে। আয়াতুল্লাহ আরাফি এ সময় ফাতিমিয়্যা (হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা)-এর শাহাদাতের দিনগুলো উপলক্ষে শোক প্রকাশ করেন এবং সমাজের ব্যবস্থাপনা, সেবা প্রদান ও ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর (হযরত ফাতিমা’র) উজ্জ্বল জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণের ওপর জোর দেন।

জনসেবার মূল্য

আয়াতুল্লাহ আরাফি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও প্রাদেশিক মেয়রদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন:
মানুষকে সেবা প্রদান এক মহান ইবাদত; যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়, তবে তা আল্লাহ ও আহলে বাইতের সন্তুষ্টির পথেই পড়ে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা হযরত ফাতিমা জাহরা (সা)-এর শোকাবহ দিনগুলো অতিক্রম করছি। তাই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁর জ্ঞান, ইবাদত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত, কারণ তাঁর জীবনই মানুষের জীবনের প্রতিটি দিকের জন্য পূর্ণাঙ্গ আদর্শ।

হাওজা ইলমিয়ার উচ্চ পরিষদের সদস্য আরও বলেন: কোম (শহর), যা ‘কারিমায়ে আহলে বাইত’—হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা)-এর শহর—এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে হযরত ফাতিমা জাহরা (সা)-এর বরকত ও নূর দ্বারা আলোকিত। এই শহর তাঁর বরকতের ছায়ায় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং আজও এটি বিশ্ব ইসলামী চিন্তাধারার আলোকবর্তিকা।

গার্ডিয়ান কাউন্সিলের (শরীয়ত বিষয়ক পরিষদ) সদস্য হিসেবে আয়াতুল্লাহ আরাফি আরও বলেন, শিয়া ও সুন্নি উভয় সূত্রেই হযরত ফাতিমা (সা)-এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য নিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন:
একটি প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদিসে নবী করিম (সা) বলেন: আল্লাহ তায়ালা হযরত ফাতিমা (সা)-এর নূর দ্বারা আসমান ও জমিনকে আলোকিত করেছেন এবং ফেরেশতাদের তাঁর নূরের আলো থেকে সৃষ্টি করেছেন।
এই হাদিস প্রমাণ করে যে, তিনি আল্লাহর নূরের উৎস, এবং তাঁর অস্তিত্বের আলোয় সৃষ্টিজগৎ অর্থপূর্ণ হয়েছে।

হযরত ফাতিমা (সা): নূরানী সত্তার প্রতিচ্ছবি ও সৃষ্টির ফয়েজের মাধ্যম

আয়াতুল্লাহ আরাফি দার্শনিক বিশ্লেষণে বলেন: ইসলামী প্রজ্ঞার দৃষ্টিতে অস্তিত্বের জগৎ বিভিন্ন স্তর ও মাত্রায় বিভক্ত। মানুষ যে ভৌত জগৎ আবিষ্কার করেছে, তা কেবল প্রথম স্তর — “মাদ্দা” বা বস্তুজগৎ। কোটি কোটি আলোকবর্ষব্যাপী নক্ষত্রমণ্ডলীর এই বিশাল বিশ্বও অস্তিত্বের সামান্য অংশমাত্র। কুরআন একে “দুনিয়া” বলে — অর্থাৎ নিচু ও নিকটবর্তী স্তর, যা উচ্চতর জগতের তুলনায় ক্ষুদ্র ও সীমিত।

তিনি বলেন, এই দৃশ্যমান জগতের পাশাপাশি আরও সূক্ষ্ম জগৎ রয়েছে — যেমন মালাকুত (আত্মিক জগৎ) ও মুজাররাদাত (অভৌত সত্তার জগৎ)। সেখানে সবকিছু নূর ও সত্যের ভিত্তিতে গঠিত। ফেরেশতাদের জগৎ হচ্ছে নূরের জগৎ — যা ভৌত আলো নয়, বরং এক ধারাবাহিক, আধ্যাত্মিক আলো যা আল্লাহর নূরের সঙ্গে যুক্ত। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে: “আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” — আল্লাহ আসমান ও জমিনের আলো। এই নূরই বিশ্বজগতকে জীবন্ত ও অর্থপূর্ণ করে।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন:
নবী করিম (সা)-এর সেই হাদিস অনুযায়ী, হযরত ফাতিমা (সা) সেই নূরের উৎস, যেখান থেকে ফেরেশতা ও আকাশসমূহ আলোকিত হয়। এর অর্থ, তাঁর অস্তিত্ব বস্তুজগতের ঊর্ধ্বে, মালাকুতের স্তরে — যেখানে নূরই বাস্তবতা ও সত্যের সার।

আয়াতুল্লাহ আরাফি শেষ করে বলেন:
কুরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষায় বলা হয়েছে যে, সমগ্র সৃষ্টিই নূরের উপর ভিত্তি করে গঠিত। হযরত ফাতিমা (সা) হলেন সেই নূরানী সত্তার পূর্ণ প্রতিফলন এবং সৃষ্টিজগতে আল্লাহর ফয়েজের মাধ্যম।
তাঁর এই মর্যাদার উপলব্ধি কেবল ঐতিহাসিক বা বর্ণনামূলক নয়; এটি এমন এক গভীর জ্ঞান যা আমাদের অস্তিত্ব, ইবাদত ও সামাজিক জীবনের অর্থ নতুনভাবে নির্ধারণ করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha