শুক্রবার ১১ এপ্রিল ২০২৫ - ১৬:৪৬
স্বামী-স্ত্রী: একে অপরের হৃদয় জয় করার উপায়

দাম্পত্য জীবনে আবেগপূর্ণ আদান-প্রদানের গুরুত্ব এবং এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরী করছি। হৃদয়ের ভাষা, কথার মাধ্যমে প্রকাশ, সংক্ষিপ্ত ও অর্থপূর্ণ কথা বলা, উপযুক্ত সময় ও স্থান বাছাই এবং সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার—এগুলোই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আপনি কি চান আপনার বিবাহিত জীবন প্রেম ও অন্তরঙ্গতায় পরিপূর্ণ হোক? দম্পতির মধ্যে আবেগের বিনিময়ই হলো এই লক্ষ্য অর্জনের সোনার চাবি। আসুন, জেনে নিই কিভাবে আরও শক্তিশালী আবেগপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। 

আবেগপূর্ণ ভাব আদান-প্রদানের গুরুত্ব
জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধ অভিব্যক্তি হলো দম্পতির মধ্যে আবেগের আদান-প্রদান। জীবনের কোনো পর্যায়েই আবেগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বিয়ের শুরুতে আবেগের বিনিময় অত্যন্ত জোরালো থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে এই সম্পর্কের গতি মন্থর হয়ে যায়। তখন জীবনে আসে একঘেয়েমি, অভিযোগ ও হতাশা। অনেক দম্পতি বুঝতে পারেন না কেন তাদের একসময়ের মধুর সম্পর্ক আজ এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা ভুলে যান যে, শুধু সম্পর্ক শুরুর জন্যই নয়, এটি টিকিয়ে রাখার জন্যও আবেগের প্রয়োজন। 

আবেগপূর্ণ ভাব আদান-প্রদানের কার্যকর পদ্ধতি

১. হৃদয়ের ভাষা (আন্তরিকতা): আবেগ বিনিময়ের সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো হৃদয়ের ভাষা। হৃদয়ই হলো সকল মানবীয় সম্পর্কের উৎস। আমাদের কথাবার্তা ও আচরণ সবই হৃদয় থেকে উৎসারিত। হৃদয় হলো অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। 

▪️নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকুন:*  হৃদয়ে হিংসা, অবিশ্বাস বা ঘৃণার বীজ বপন করলে তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সম্পর্কের ক্ষতি করে। যদি কেউ তার হৃদয়ে অপ্রীতিকর অনুভূতি লালন করে, তবে তা শেষ পর্যন্ত তিক্ত আচরণে রূপ নেয়। 

▪️ইতিবাচক আবেগ গড়ে তুলুন: আপনার হৃদয়কে এমনভাবে গড়ে তুলুন যেখানে আপনার সঙ্গীর জন্য ইতিবাচক অনুভূতি জন্ম নেয়। আপনি যেমন চান আপনার সঙ্গী আপনাকে ভালোবাসুক, তেমনই তার জন্যও হৃদয়ে ভালোবাসা রাখুন। হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “হৃদয় হলো জবানের ভাণ্ডার।”

২. কথার মাধ্যমে প্রকাশ (ভাষাগত পদ্ধতি)
হৃদয়ের আবেগ প্রকাশের সবচেয়ে সুন্দর মাধ্যম হলো কথা। নিচে কিছু কার্যকর কথোপকথনের কৌশল দেওয়া হলো: 

▪️সুন্দরভাবে কথা শুরু করুন: কথার শুরুটা সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হলে তা শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করে। নম্র ও কোমল স্বরে কথা বলুন। ফরাসি দার্শনিক পল রেনোর মতে, “উচ্চস্বরে কথা বললে মানুষ আপনার আওয়াজ শুনবে, কিন্তু নম্রভাবে বললে তারা আপনার কথা শুনবে।” 

হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “যে সুন্দরভাবে কথা বলে, তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।”

▪️হৃদয়ের ভাষায় কথা বলুন: শুধু যুক্তিনির্ভর কথা নয়, হৃদয় দিয়ে কথা বলুন। হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “যে কথা হৃদয় থেকে আসে, তা হৃদয়েই প্রবেশ করে। কিন্তু যে কথা কেবল জবান থেকে আসে, তা কান ভেদ করে হৃদয়ে প্রবেশ করে না।”

 
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এটি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, স্বামী যদি দেরি করে বাড়ি ফেরে, তখন রাগের বদলে বলুন, “আমি তোমার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, পরের বার দেরী হলে জানাবে কিন্তু?”

▪️সংক্ষিপ্ত ও অর্থপূর্ণ কথা বলুন: অতিরিক্ত কথা বললে শ্রোতা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “(একই কথার) পুনরাবৃত্তি বিরক্তিকর।”

৩. উপযুক্ত সময় ও স্থান বাছাই
কথোপকথনের সময় ও স্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই কথা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। 

▪️সকালের সময়টি আদর্শ: সকালে মন প্রফুল্ল থাকে, তাই একে অপরের তাড়হুড়ো না থাকলে এ সময় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা ভালো। 

▪️ক্লান্তি বা অসুস্থতার সময় এড়িয়ে চলুন: হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “হৃদয় সবসময় কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকে না, যখন এটি প্রাণবন্ত থাকে তখনই কথা বলুন।”

৪. সহজ ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার
জটিল ভাষা ব্যবহার করলে বার্তা ঠিকভাবে পৌঁছায় না। সহজ ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলুন যাতে আপনার সঙ্গী তা বুঝতে ও মানতে পারে। 

সহযোগী বই:

১. আফসুনে সুখান – সৈয়দ মোস্তফা মোসাভি হারমি 

২. খনেবদেহ- ই মুতা’দেল (পরিবারে ভারসাম্য) – মোহাম্মদ রেজা শরফি 

৩. সাইকোলজি অব ফ্যামিলি– গোলাম আলী আফরোজ 

৪. আধুনিক দাম্পত্য সম্পর্ক – এজতেসাদাত মীরখানি 

উৎস: দাম্পত্য সম্পর্কের কথোপকথন, পৃষ্ঠা ১-৫ 

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আমরা দাম্পত্যকলহ এড়িয়ে স্ত্রী বা স্বামীর হৃদয় জয় করতে পারব এবং একটি সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে পারব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি/ রাসেল আহমেদ রিজভী

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha