হওজা নিউজ এজেন্সি: আজকের যুগে ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন ও সন্দেহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা দিচ্ছে।
তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো:
কেন মানুষকে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম অনুসরণ করতে হবে? ধর্ম ছাড়া কি নৈতিক জীবন যাপন করে পরিপূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়?
এই প্রশ্নগুলোর যুক্তিসঙ্গত ও গভীর উত্তর জানতে, আমরা কথা বলেছি হুজ্জতুল ইসলাম রেজা পারচেহবাফ — যিনি ধর্মীয় ও নৈতিক সংশয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এই আলোচনায় অংশ নিতে, যাতে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং জীবনে তার ভূমিকা সম্পর্কে আরও গভীর উপলব্ধি অর্জন করা যায়।
১. মানুষের স্বভাবজাত অনুসন্ধান ও প্রয়োজন:
মানুষের স্বভাব হলো জীবনের উদ্দেশ্য, অস্তিত্বের রহস্য এবং সৃষ্টির উত্স সম্পর্কে জানতে চাওয়া। ঐশী ধর্মসমূহ একটি পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মানুষের এই স্বভাবজাত প্রশ্নের উত্তর দেয়।
কুরআনে বলা হয়েছে:
فَأَقِمْ وَجْهَکَ لِلدِّینِ حَنِیفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِی فَطَرَ النَّاسَ عَلَیْهَا
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের প্রতি নিবেদিত করো— এটাই আল্লাহর নির্ধারিত প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম, আয়াত ৩০)
২. পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা ও ঈশ্বরীয় পথনির্দেশনা:
সত্যিকারের পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয় মানুষ, বিশ্ব এবং স্রষ্টাকে সঠিকভাবে চিনে।
ধর্ম হচ্ছে সেই ঈশ্বরীয় নির্দেশনা, যা এই জ্ঞান ও উপলব্ধির পথ দেখায়।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:
الدِّینُ یُصْلِحُ الْأُمُورَ الَّتِی لَا یُصْلِحُهَا الْعَقْلُ
ধর্ম এমন বিষয়সমূহকে সুশৃঙ্খল করে, যা কেবল বুদ্ধি দিয়ে সম্ভব নয়।
৩. ধর্ম ছাড়া নৈতিক জীবন যাপনের চ্যালেঞ্জ:
নৈতিকতা ধর্মের অনুপস্থিতিতে আপেক্ষিক হয়ে পড়ে; তখন ভালো-মন্দ নির্ধারণের নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকে না।
ধর্ম পরকালের পুরস্কার ও সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির বিশ্বাসের মাধ্যমে নৈতিকতার প্রতি গভীর ও স্থায়ী অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।
সাধারণ নৈতিকতা কেবল মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে, কিন্তু ধর্ম মানুষের সাথে আল্লাহর, নিজের, এবং সৃষ্টিজগতের সম্পর্কও সুশৃঙ্খল করে।
৪. কেন নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম অনুসরণ করা উচিত?
যদি আমরা মেনে নিই যে ধর্ম প্রয়োজনীয়, তবে আমাদের এমন একটি ধর্ম অনুসরণ করতে হবে, যা:
- আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত (মানুষের তৈরি নয়);
- পূর্ণাঙ্গ ও সর্বজনীন;
- বুদ্ধি ও মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ;
এবং শেষ ও সম্পূর্ণ ধর্ম হওয়ার দাবি করে (যেমন ইসলাম, যা নিজেকে চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ ঐশী ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করে)।
যদিও মানুষ ধর্ম ছাড়া কিছু নৈতিক মূল্যবোধ পালন করতে পারে, তবে ধর্মবিহীন নৈতিকতার গভীরতা ও স্থায়ীত্ব সীমিত। ধর্ম বুদ্ধির সহচর ও পরিপূরক — ধর্ম ছাড়া মানুষ পরিপূর্ণতার পথে বিভ্রান্ত হতে পারে।
আপনার কমেন্ট