মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫ - ১৪:২৬
হযরত মাসুমা (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো-সমাজের ইমামের পেছনে চলা

আস্তানে কুদসে রেজভীর তত্ত্বাবধায়ক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আহমদ মারভি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.) ছিলেন আল্লাহর প্রতিনিধি তথা ইমামের পথে ধৈর্য ও দৃঢ়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.)-এর বার্তা হলো—সমাজের ইমামের অনুসরণে থাকা।

হাওজা নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আস্তানে কুদসে রেজভীর তত্ত্বাবধায়ক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আহমদ মারভি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.) ছিলেন আল্লাহর প্রতিনিধি তথা ইমামের পথে ধৈর্য ও দৃঢ়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.)-এর বার্তা হলো—সমাজের ইমামের অনুসরণে থাকা। অতএব, আজ আমাদের কর্তব্য হলো, যে সিদ্ধান্তই বিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতা তথা রাহবর নেন, আমরা যেন তাঁর অনুসরণে থাকি।

তিনি আজ দহে-ই-করামতের উৎসবের সূচনায় হযরত মাসুমা (সা.)-এর জন্মবার্ষিকীতে পবিত্র মাজারে আয়োজিত খুতবা পাঠ অনুষ্ঠানে বলেন: ইমাম রেজা (আ.) একটি হাদীসে বলেন, কোনো মুমিন পূর্ণ ঈমানের মর্যাদায় পৌঁছায় না যতক্ষণ না তার মধ্যে একটি গুণ আল্লাহর কাছ থেকে, একটি গুণ নবীর কাছ থেকে এবং একটি গুণ ইমামের কাছ থেকে থাকে।

তিনি বলেন, ইমামের কাছ থেকে যেই গুণটি একজন মুমিনের অর্জন করা উচিত তা হলো—ধৈর্য, সহনশীলতা ও সংকট মোকাবিলায় দৃঢ়তা। তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যদি একজন মুমিন ধৈর্য ও সহনশীলতার গুণে নিজেকে সাজায়, তবে আল্লাহ তাকে অফুরন্ত পানীয়ে তৃপ্ত করবেন; কিন্তু যে ব্যক্তি দুর্বলতা, বক্রতা ও সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি বেছে নেয়, তার জন্য শাস্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, সমাজের নানা বিপথগামিতার মূল কারণ হচ্ছে বিশেষ করে প্রভাবশালীদের মধ্যে ধৈর্যের অভাব ও অস্থিরতা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইমাম সাদিক (আ.)-এর শাহাদত দিবসে ৭০ ও ১৪০ হিজরির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ধৈর্যের অভাব, অযথা প্রতিবাদ, ভ্রান্ত বিশ্লেষণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা শুধু ঐতিহাসিক সুযোগ নষ্ট করেনি, বরং সভ্যতাগত অগ্রগতির স্বাভাবিক ধারা কয়েক দশক বা শতাব্দী পিছিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাণী হলো, যদি মানুষ তাড়াহুড়োর ফাঁদে না পড়তো, তবে ধ্বংস হতো না। তাই সমাজের বুদ্ধিজীবীদের উচিত—সমাজ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি রাখা, কারণ তাড়াহুড়োর বিশ্লেষণ, অযথা প্রতিবাদ কিংবা সময়ের আগেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধুই কৌশলগত ভুল নয়, বরং তা সমাজ, বিপ্লব ও জনগণের ওপর ইতিহাস বদলে দেওয়া নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও সামাজিক পুঁজিকে দুর্বল করে।

তিনি বলেন, কোনো বিশ্লেষণ যেন বাহ্যিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হলেও তা যেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি—জনগণের আস্থা ও সমর্থন—কে লক্ষ্য না করে। প্রতিটি কথা ও বিশ্লেষণ এমন হওয়া উচিত যা রাহবরে আজমের চিন্তাভাবনার মানদণ্ডে পরিমাপযোগ্য হয়, কারণ রাহবর সর্বদা মানুষের পথপ্রদর্শনে সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন। আমাদের উচিত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নানা বিশ্লেষণ সমাজে ছড়িয়ে না দেওয়া।

তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.) ছিলেন ইমামের পথে ধৈর্যের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর মদিনা থেকে খোরাসানে হিজরতের অন্যতম লক্ষ্য ছিল—ইমাম রেজা (আ.)-এর মর্যাদা ও নেতৃত্বকে উচ্চে তুলে ধরা। তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.)-এর শিয়া জ্ঞানচর্চা প্রচারে এক উচ্চতর স্থান আছে। এমনকি ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময়েও, যখন ইমাম কাযিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেননি, তখনই তাঁর আলোচনা হয়েছিল।

তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.) তাঁর হিজরতের পথে বহু কষ্ট সহ্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ইমামের পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর মাধ্যমে বহু জ্ঞানচর্চা, রাজনৈতিক ও সভ্যতাগত প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, যার অন্যতম ফল হলো ইসলামী বিপ্লব, যা ছিল তাঁর ও তাঁর ইমামপন্থী ধৈর্যের ফসল।

তিনি শেষপর্যন্ত বলেন: যে ব্যক্তি ইমামের চেয়ে সামনে চলে যায়, তার পরিণতি ভালো হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। হযরত মাসুমা (সা.) আমাদের শেখান—ইমামের পথ অনুসরণ করা, ধৈর্য ধারণ করা এবং সমাজের ইমামের পেছনে থাকা। অতএব, আজকের দিনে আমাদের উচিত—রাহবরে আজম যেটি যথার্থ মনে করেন, আমরাও সেই পথেই চলা এবং আমাদের বক্তব্য ও অবস্থান সেই পথের অনুসারী হওয়া।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha