বুধবার ৪ জুন ২০২৫ - ২০:১৪
ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই: আরাকচি

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন যে, ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার জন্য তাদের কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই এবং তারা জাতীয় স্বার্থ ও নীতিগত অবস্থান বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের জবাব দেবেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বৈরুতে নিজের লেখা বই “মুজাকেরাত কি তাকত” (আলোচনার শক্তি) ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে তার দায়িত্ব শুরু করেন, তখনই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপের নীতির দলিল প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল ইরানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাড়ানো। এর আওতায় আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো হয়, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়, এবং বোমারু যুদ্ধবিমানের সংখ্যাও বাড়ানো হয়—এভাবে অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক হুমকিও বৃদ্ধি পায়।

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেন, এরপর ট্রাম্প ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে আলোচনা শুরুর অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আলোচনার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয় এবং যথেষ্ট শক্তি ছাড়া কোনো আলোচনায় কার্যকর অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেয়, তারা মার্কিন শর্তে নয়, নিজেদের শর্তে আলোচনা করবে—যার মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরাকচি বলেন, যদি আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা শক্তি না থাকতো এবং যুক্তরাষ্ট্র সহজেই আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করতে পারতো, তবে তাদের আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজনই পড়ত না।

তিনি জানান, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি লিখিত প্রস্তাব পেয়েছি, তবে এতে অনেক অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন রয়েছে, এবং অনেক বিষয়ই পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের নীতিগত অবস্থান ও ইরানি জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রস্তাবের যথাযথ জবাব দেব।

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের অভ্যন্তরে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ আমাদের রেড লাইন (সীমারেখা), এটি একটি স্বীকৃত বাস্তবতা এবং মনে হচ্ছে বিশ্বের সব দেশই এটি মেনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ ইরানিদের জন্য জাতীয় গৌরব ও সম্মানের বিষয়। এটি একটি বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব যা ইরানি বিজ্ঞানীরা তাদের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করেছেন। এটি কোনো আমদানি করা বস্তু নয়, যাতে উপেক্ষা করা যায়।

তিনি আরও বলেন, ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। আমাদের বহু পারমাণবিক বিজ্ঞানী বিদেশি সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হয়েছেন, আর তাদের রক্ত এই শিল্পের কারণেই ঝরেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে ইরানে দশ লাখেরও বেশি মানুষ এমন ওষুধের ওপর নির্ভরশীল যেগুলো তেহরানের গবেষণামূলক পারমাণবিক রিয়্যাক্টরে উৎপাদিত হয়। ফলে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ ইরানের জন্য একান্তই প্রয়োজনীয় এবং আমরা এটি চালিয়ে যাব।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha