হাওজা নিউজ এজেন্সি: এই গবেষণামূলক আলোচনায় রাজআতের (رجعت) গুরুত্ব, পরিসর ও শর্তাবলি নিয়ে নির্ভরযোগ্য ইসলামি উৎসসমূহের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে:
১. রাজআত (رجعت) বা পুনরুত্থান: আল্লাহর নিযুক্ত দিবসসমূহের অন্তর্ভুক্ত
রাজআত (رجعت) কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং ইমাম সাদিক (আ.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী এটি "ایّام الله" অর্থাৎ আল্লাহর নিদৃষ্ট দিবসসমূহের একটি।
তিনি বলেন:
أَيَّامُ اللَّهِ ثَلَاثَةٌ: يَوْمُ يَقُومُ الْقَائِمُ، وَيَوْمُ الْكَرَّةِ، وَيَوْمُ الْقِيَامَةِ
আল্লাহর দিবস তিনটি: ইমাম মাহদীর (আ.) কিয়ামের দিন, رجعت তথা পুনরুত্থানের দিন এবং কেয়ামতের দিন। [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫৩, পৃ. ৬৩]
এ বক্তব্য থেকে رجعت-এত গুরুত্ব এবং তার ন্যায়বিচারিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সুস্পষ্ট হয়।
২. رجعت-এ বিশ্বাস: শিয়া পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ
পূনরুত্থান (رجعت) এমন একটি আকিদা যা আহলে বাইতের (আ.) প্রকৃত অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যরূপে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يُؤْمِنْ بِكَرَّتِنَا
যে ব্যক্তি আমাদের رجعت-এ বিশ্বাস রাখে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [বিহারুল আনওয়ার, খ. ৫৩, পৃ. ৯২]
৩. পূনরুত্থান হবে সীমিত পরিসরে: সার্বজনীন নয়
পূনরুত্থান বা رجعت একটি বাছাইকৃত ইলাহি ব্যবস্থা, যা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
الرَّجْعَةُ لَيْسَتْ بِعَامَّةٍ، وَهِيَ خَاصَّةٌ؛ لَا يَرْجِعُ إِلَّا مَنْ مَحَضَ الْإِيمَانَ مَحْضاً أَوْ مَحَضَ الشِّرْكَ مَحْضاً
পূনরুত্থান তথা رجعت সার্বজনীন নয়; বরং কেবল তারাই ফিরে আসবে, যারা নিখাদ ঈমানদার কিংবা নিখাদ কাফির ও মুনাফিক। [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড- ৫৩, পৃষ্ঠা- ৩৯]
৪. পূনরুত্থানের (رجعت) নেতৃত্বে থাকবেন ইমাম হুসাইন (আ.)
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে নবীগণ ও ইমামগণও رجعت-এর আওতায় থাকবেন।
ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) কিয়ামের পর সর্বপ্রথম যিনি ফিরে আসবেন এবং দীর্ঘ সময় শাসন করবেন, তিনি হলেন ইমাম হুসাইন (আ.ফা.)।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
أَوَّلُ مَنْ يَرْجِعُ إِلَى الدُّنْيَا الْحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ (ع)، فَيَمْلِكُ حَتَّى يَسْقُطَ حَاجِبَاهُ
প্রথম যিনি رجعت-এর আওতায় ফিরে আসবেন, তিনি হলেন ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তিনি এত দীর্ঘ সময় শাসন করবেন যে, বার্ধক্যের কারণে তাঁর ভ্রু চোখের উপর নেমে আসবে।” [বিহাররুল আনওয়ার, খন্ড- ৫৩, পৃষ্ঠা- ৪৬]
৫. দোআয়ে আহাদ ও رجعت-এর সুযোগ
যেসব মুমিন ইমাম মাহদীর (আ.) আগমনের পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দোআয়ে আহাদ পাঠ করে رجعت-এর সুযোগ অর্জন করতে পারেন।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, “যে ব্যক্তি চল্লিশ সকাল 'দোআয়ে আহাদ' পাঠ করবে, সে ইমামের আনসারদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি সে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাকে কবর থেকে জীবিত করে ইমামের পাশে নিয়ে আসবেন।” [মাফাতিহুল জিনান]
দোআয়ে আহাদের অংশ:
اللّهُمَّ إِنْ حالَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ الْمَوْتُ... فَأَخْرِجْنِي مِنْ قَبْرِي...
হে আল্লাহ! যদি মৃত্যু আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা হয়ে দাঁড়ায়, তবে আমাকে আমার কবর থেকে বের করো...” [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড- ৯৯, পৃষ্ঠা- ১১১]
৬. মুমিনদের رجعت হবে ইচ্ছানুযায়ী, কাফিরদের হবে বাধ্যতামূলক
পূনরুত্থান তথা رجعت মুমিনদের জন্য একটি সম্মান ও বিকল্পভিত্তিক সুযোগ।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
إِذَا قَامَ الْقَائِمُ... يُقَالُ لِلْمُؤْمِنِ: إِنْ تَشَأْ أَنْ تَلْحَقَ بِهِ فَالْحَقْ، وَإِنْ تَشَأْ أَنْ تُقِيمَ فِي كَرَامَةِ رَبِّكَ فَأَقِمْ
তোমার ইমাম কিয়াম করেছেন—তুমি চাইলে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে পারো, চাইলে বারযখে থাকতেই পারো। [আল-গায়বা- শেখ তুসী, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৪৫৮]
অপরপক্ষে, কাফির ও মুনাফিকদের পূনরুত্থান হবে অবধারিত, লাঞ্ছনাকর ও শাস্তিপূর্ণ।
পূনরুত্থান তথা رجعت শিয়া আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা শুধু অতীন্দ্রিয় কোনো বিশ্বাস নয়; বরং এটি ন্যায়বিচার, ঐতিহাসিক পুনর্বাসন এবং ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর বৈশ্বিক সরকারের পূর্ণতার অংশ।
এই বিশ্বাস মুমিনদের আশার প্রতীক এবং ইতিহাসের চূড়ান্ত সত্যপ্রতিষ্ঠার এক অলৌকিক মাধ্যম। যারা জীবনে ইমামের পথে ছিল, তাদের জন্য رجعت এক ঈশ্বরীয় প্রতিদান। আর যারা মিথ্যার প্রতীক হয়ে থেকেছে, তাদের জন্য এটি হবে চূড়ান্ত বিচার।
গ্রন্থসূত্র: “নেগিনে অফারিনেশ” গ্রন্থ থেকে সংকলিত ও কিঞ্চিৎ সম্পাদিত।
আপনার কমেন্ট