সোমবার ৪ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:৪২
শিয়ারা কি ইমাম আলী (আ.)’কে মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকে?

শিয়াদের বিরুদ্ধে বরাবরই অপবাদ ও মিথ্যাচার করা হয়ে থাকে যে, শিয়ারা ইমাম আলী (আ.)’কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কেউ কেউ তো একধাপ এগিয়ে বলে থাকে যে, শিয়ারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’কে নয়, হযরত আলী (আ.)’কেই নবী মানে! এর কী আদৌও সত্যতা রয়েছে?

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব আলী নওয়াজ খান তার এক লিখিত নিবন্ধে বলেন, “না, শিয়া মুসলমানরা কখনোই ইমাম আলী (আ.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মনে করে না। বরং, শিয়া আকীদা অনুযায়ী মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) হলেন সৃষ্টির সেরা মানব, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, যার মর্যাদা ও অবস্থান কোনো ইমাম বা নবী স্পর্শ করতে পারে না।

অতঃপর তিনি তার লেখা চালিয়ে যান, যা হুবহু তুলে ধরছি:

শিয়া মতানুযায়ী র‍্যাঙ্কিং (ধারাবাহিকতা): চৌদ্দ মাসুমিন’ (১৪ জন নিষ্পাপ ব্যক্তি), তথা:

১. রাসুলুল্লাহ (সা.)– নবুয়তের শীর্ষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানব

২. ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.)– সকল নারীদের শ্রেষ্ঠা ও ইমাম আলী (আ.)’সহ বারো ইমামগণ।

শিয়া বিশ্বাসের প্রমাণ ও যুক্তি:

১. কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে একটি উত্তম আদর্শ রয়েছে।”[সূরা আহ্‌যাব ৩৩:২১]

শিয়ারা বিশ্বাস করে রাসুলুল্লাহ (সা.) হলেন “উসওয়াতুন হাসানা”, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ, যা কারো পক্ষেই ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁর উপর প্রাধান্য দেয়া কুফরি, যা শিয়া বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত।

২. আহলুল বাইতের হাদীস
ইমাম আলী (আ.) নিজেই বলেন,

أنا عبد من عبيد محمد
“আমি মুহাম্মাদ (সা.)-এর গোলামদের একজন।” 
[নাহ্‌জুল বালাগা]

ইমাম আলী (আ.) বারবার নিজেকে রাসুলের দাস ও অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, কখনোই নিজেকে তাঁর উপরে দাবি করেননি। শিয়ারাও তাঁর পথ অনুসরণ করে।

৩. ইমাম আলী (আ.)-এর মর্যাদা, কিন্তু সীমা অনুযায়ী
শিয়া বিশ্বাস করে ইমাম আলী (আ.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর সবচেয়ে গুণবান ও ধার্মিক মানুষ। কিন্তু “উত্তম” (أفضل) ও “সর্বোচ্চ” (أعلى) এর মাঝে পার্থক্য আছে। শিয়ারা বলে:
نبي أفضل من كل بشر، حتى من عليّ
“নবী (সা.) সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এমনকি আলীর চেয়েও।”

কেন ভুল ধারণা তৈরি হয়?

১. ইমামত বা নেতৃত্বের বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়– শিয়ারা বিশ্বাস করে নবুয়্যতের পর ইমামত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত নেতৃত্ব, যা রাসুলের পথ চালিয়ে যায় নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায়, নবুয়্যতের নয়।

২. বিরোধীদের প্রচারণা– শিয়াদের দমন করতে বহুবার এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে যে, তারা নাকি নবীকে কম গুরুত্ব দেয়।

পরিশেষ, শিয়া মুসলমানরা কখনোই ইমাম আলী (আ.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপরে প্রাধান্য দেয় না। বরং তারা ইমাম আলী (আ.)-কে ভালোবাসে, কারণ তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর শ্রেষ্ঠ মানব, যিনি সর্বদা নবীর আদেশ পালন করেছেন এবং ইসলামের প্রকৃত ও সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ বহন করেছেন।

তাই উপরিউক্ত ভুল ধারণা পরিহার করা উচিত এবং শিয়া আকিদা-বিশ্বাসকে তাদের নিজস্ব উৎস থেকে বোঝা জরুরি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha