হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদি আমুলি বলেন, আরবাঈন জিয়ারত মানুষের অন্তর থেকে অস্থিরতা, অতিলোভ ও কৃপণতার মতো নেতিবাচক স্বভাব দূর করে। এ লক্ষ্য পূরণে ইমাম হুসাইন (আ.) কখনও ভাষা ও লেখনীর মাধ্যমে, আবার কখনও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে সংগ্রাম করেছেন।
আরবাঈন জিয়ারতের গুরুত্ব
এক লিখিত বার্তায় তিনি আরবাঈন জিয়ারতের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন,
“মুমিন ও শিয়ার পাঁচটি নিদর্শন হলো— পঞ্চান্ন রাকাত নামাজ কায়েম করা, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আরবাঈন জিয়ারত, ডান হাতে আংটি পরা, মাটির ওপর সিজদা করা এবং উচ্চস্বরে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলা।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, পঞ্চান্ন রাকাত নামাজ বলতে বোঝানো হয়েছে— দৈনিক ফরজ ১৭ রাকাত নামাজের সঙ্গে নফল নামাজগুলো, যা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করে। বিশেষত সাহারের সময় তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এ নামাজ শিয়া মুসলমানদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মেরাজের অমূল্য উপহার। সম্ভবত নামাজকে “মুমিনের মেরাজ” বলে অভিহিত করার কারণও এই যে, এর আদেশ মেরাজে এসেছে এবং নামাজ মানুষকে আধ্যাত্মিক উন্নতিতে পৌঁছে দেয়।
আরবাঈন জিয়ারতের মর্যাদা শুধু এ কারণে নয় যে, এটি ঈমানের নিদর্শন; বরং ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, এর অবস্থান ফরজ ও নফল নামাজের সমপর্যায়ে। যেমন নামাজ দ্বীনের স্তম্ভ, তেমনি আরবাঈন ও কারবালার ঘটনা হলো ‘বেলায়েত’-এর স্তম্ভ।
কুরআন, আহলে বাইত ও আরবাঈন
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি— আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত।”
কুরআন, যা দ্বীনের সারাংশ, তার স্তম্ভ হলো নামাজ; আর আহলে বাইতের (আ.) সারাংশের স্তম্ভ হলো আরবাঈন জিয়ারত। এ কারণে ইমাম হাসান আসকারি (আ.) নামাজ ও আরবাঈনকে একই স্তরে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা বোঝা যে— নামাজ ও আরবাঈন কীভাবে মানুষকে প্রকৃত ধর্মনিষ্ঠ করে তোলে।
আত্মশুদ্ধিতে নামাজ ও আরবাঈনের ভূমিকা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে নামাজের নানা ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন— মানুষ স্বভাবে তাওহীদবাদী হলেও, বিপদে পড়ে অস্থির হয়ে যায় এবং কল্যাণ পেলে কৃপণতা করে; কিন্তু নামাজী ব্যক্তিরা এই প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর বিশেষ রহমতের যোগ্য হয়:
إنّ الإنسان خلق هلوعاً إذا مسّه الشرّ جزوعاً و إذا مسّه الخیر منوعاً إلّا المصلّین
“নিশ্চয় মানুষকে অস্থিরভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে, সে অস্থির হয়; আর যখন কল্যাণ স্পর্শ করে, সে কৃপণ হয়— তবে নামাজীরা এর ব্যতিক্রম।”
[সূরা আল-মা’আরিজ: ১৯-২২]
একইভাবে, আরবাঈন জিয়ারতও মানুষের অন্তরের এই অস্থিরতা, লোভ ও কৃপণতা দূর করে। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধি; এজন্য তিনি কলম ও ভাষার মাধ্যমে দাওয়াত দিয়েছেন, আবার প্রয়োজনে নিজের রক্ত উৎসর্গ করেছেন। এই দুই পথের অনন্য সমন্বয়ই ছিল তাঁর (আ.) বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
সূত্র: “শুকূফায়ে আকাল দার পারতোয়ে নাহযাতে হোসেইনি”, পৃষ্ঠা ২২৭-২২৯
আপনার কমেন্ট