শনিবার ১৬ আগস্ট ২০২৫ - ১৮:৫১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা AI: সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাঠামোর ওপর এর প্রভাব

ইরানের সাংসদ সদস্য ও আল-মোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সতর্ক করেছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশ সমাজের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, শত্রুর নরম আগ্রাসনের মোকাবিলায় চিন্তা ও মূল্যবোধের সীমানা রক্ষা করা মূলত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে হাওযায়ে ইলমিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সর্বোচ্চ নেতা “শুহদায়ে ইকতেদার” এর আরবাঈনের বার্তায়ও হাওযায়ের ভূমিকা হিসেবে بصیرت (অন্তর্দৃষ্টি) বৃদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা সঞ্চার এবং সামাজিক প্রশান্তি সৃষ্টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
হাওজা নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুজ্জাতুল ইসলাম আলী আব্বাসি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রভাব বহু-মাত্রিক এবং এটি কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক এমনকি ধর্মীয় আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তার মতে, AI নতুন নৈতিক ও আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন করছে—যেমন স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্তের দায়িত্ব, গোপনীয়তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা। আবার, ধর্মীয় পাঠ বিশ্লেষণে সতর্কতা ছাড়া AI ব্যবহার করলে অর্থ বিকৃতির ঝুঁকি তৈরি হবে।

তিনি সতর্ক করেন, প্রযুক্তির সীমিত প্রবেশাধিকার সামাজিক বৈষম্য বাড়াতে পারে। তবে একইসঙ্গে AI ধর্মীয় শিক্ষা ও সমাজসেবায় নতুন সুযোগও এনে দিতে পারে।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ
হুজ্জাতুল ইসলাম আলী আব্বাসি ইসলামি মানদণ্ডে AI ব্যবহারের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপের সুপারিশ করেন, যার মধ্যে রয়েছে—

১. মানবিক বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মের সঙ্গে AI-কে সংযুক্ত করে গবেষণা ও শিক্ষা,

২. ইসলামী নৈতিকতায় ভিত্তিক অ্যালগরিদম তৈরি,

৩. সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি,

৪. আলেমদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ,

৫. নীতি ও আইন প্রণয়ন,

৬. সংবেদনশীল ক্ষেত্রে নজরদারি,

৭. বিশ্ববিদ্যালয় ও হাওযার মধ্যে সহযোগিতা,

৮. আন্তর্জাতিক একাডেমিক-ধর্মীয় সংলাপ আয়োজন।

সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনা
তিনি জানান, রাহবারে মুয়াজ্জাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের জন্য চারটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর জোর দিয়েছেন:

১. তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো তৈরি,

২. বিশেষজ্ঞ মানবসম্পদ গড়ে তোলা,

৩. মৌলিক ও প্রয়োগমূলক গবেষণায় সহায়তা,

৪. জাতীয় নীতি ও বিধি প্রণয়ন।

রাহবার স্পষ্ট করে বলেছেন—ইরানকে কেবল ভোক্তা নয়, বরং AI-এর উৎপাদক হতে হবে; নতুবা প্রযুক্তিগত নির্ভরতা জাতীয় স্বাতন্ত্র্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও ইরানের দায়িত্ব
হুজ্জাতুল ইসলাম আলী আব্বাসির মতে, বিশ্বব্যাপী AI নিয়ন্ত্রণে নীতি ও আইন প্রণয়ন হচ্ছে মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থরক্ষা ও প্রযুক্তিগত প্রাধান্য ধরে রাখার জন্য। তাই ইরানকে অবশ্যই নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভিত্তি করে স্বতন্ত্র নীতি তৈরি করতে হবে।

যুদ্ধক্ষেত্রে AI-এর ব্যবহার
তিনি সাম্প্রতিক ১২ দিনের প্রতিরোধযুদ্ধের অভিজ্ঞতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, শত্রুপক্ষ তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সামরিক অপারেশনে AI ব্যবহার করেছে। তাই ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উভয় ক্ষেত্রেই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

হাওজায়ের ইলমিয়ার দায়িত্ব
সবশেষে হুজ্জাতুল ইসলাম আব্বাসি বলেন, আধুনিক যুদ্ধের বড় অংশই হলো “জ্ঞান ও উপলব্ধির যুদ্ধ”। তাই সমাজের চিন্তা ও উপলব্ধির সীমানা রক্ষা হাওযায়ে ইলমিয়ার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “হাওজার শিক্ষার্থীদের মিডিয়া দক্ষতা অর্জন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সংহতি ও ধর্মীয় পরিচয়কে শক্তিশালী করতে হবে—এটাই এ যুগের অপরিহার্য দায়িত্ব।”

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha