হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র চেহেলুমের সন্ধ্যায় হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.)’র মাজারে আয়োজিত আধ্যাত্মিক বক্তৃতায় তিনি শিয়া সংস্কৃতিতে জিয়ারতে আশুরা’র গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেন। তাঁর মতে, এটি কেবল একটি জিয়ারতের পাঠ নয়; বরং জীবন পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ “জীবনদর্শন” বা “লাইফস্টাইল”-এর উৎস।
তিনি উল্লেখ করেন, জিয়ারতে আশুরায় ২০টিরও বেশি আধ্যাত্মিক দোয়া ও অনুরোধ রয়েছে। এর মধ্যে তিনবার এসেছে বাক্যটি – “اللهم اجعلنی” (“হে আল্লাহ! আমাকে বানিয়ে দিন...”) – যা জীবনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়। এর একটি হলো – “اللهم اجعلنی وجیهاً بالحسین علیه السلام” – অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! ইমাম হুসাইনের (আ.) মাধ্যমে আমাকে আপনার নিকট সম্মানিত করে দিন।”
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি বলেন, ‘وجیه’ (সম্মানিত) শব্দটি কুরআনে মাত্র দুইবার এসেছে—একবার সুরা আলে ইমরানে হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে এবং একবার সুরা আহযাবে হযরত মূসা (আ.) সম্পর্কে। উভয় ক্ষেত্রেই তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ণের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ নিজেই তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করেছেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানুষের সম্মান এতটাই মূল্যবান যে আল্লাহ তা রক্ষায় বিশেষ অলৌকিক ব্যবস্থা নেন। যেমন, হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতা মরিয়ম (আ.)-এর বিরুদ্ধে অপবাদ দূর করতে ঈসা (আ.) শৈশবে কথা বলে মায়ের পবিত্রতা প্রমাণ করেছিলেন। আর হযরত মূসা (আ.)-এর বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের মিথ্যা অভিযোগ আল্লাহর প্রত্যক্ষ সমর্থনে খণ্ডিত হয়েছিল।
সুরা হুজরাতের আলোকে তিনি ছয়টি বড় গুনাহের কথা উল্লেখ করেন, যা মানুষের সম্মান ধ্বংস করে—(১) উপহাস, (২) গোপনে অনুসন্ধান, (৩) কু-ধারণা, (৪) গীবত, (৫) অপমানজনক ডাকনাম দেওয়া, এবং (৬) দোষ খোঁজা। এগুলো শুধু বড় গুনাহ নয়, বরং ব্যক্তির সামাজিক ও আধ্যাত্মিক মূলধন ধ্বংস করে দেয়। তাই নিরাপত্তা বা সামাজিক কার্যক্রমেও মানুষের সম্মান রক্ষার নীতি ভঙ্গ করা যাবে না।
ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক উদাহরণ দিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন—একজন মুমিনের সম্মান নষ্টের ক্ষতি কখনো পূরণ হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন—একজন মুমিনের সম্মান কাবার সম্মানের চেয়েও তিনগুণ বেশি। যে ব্যক্তি মুমিনের সম্মান নষ্ট করে, সে যেন তিনবার কাবা ধ্বংস করল।
তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ইমাম হুসাইনের (আ.) খিদমত আল্লাহর নিকট সম্মান অর্জনের অন্যতম বড় মাধ্যম। যেমন হুর (রহ.) তওবা করে ইমামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে “وجیه عندالله” হয়েছিলেন, তেমনি যে কেউ ইমামের এই নাজাতের নৌকায় আশ্রয় নেবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে ইজ্জত পাবে।
প্রখ্যাত আলেম মোল্লা আলী কানি প্রমুখের জীবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন—যেখানে ইমাম হুসাইনের (আ.) নাম ও খিদমত থাকবে, সেখানেই থাকবে সম্মান ও মর্যাদা। এটাই সেই প্রকৃত ইজ্জত, যা আমরা জিয়ারতে আশুরায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।
শেষে তিনি কিয়ামতের দিনে ইমাম হুসাইনের (আ.) জিয়ারতকারীদের বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, রেওয়ায়াতে এসেছে—জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম “বাবুল হুসাইন (আ.)”, যা কেবল তাঁদের জন্য, যারা দুনিয়ায় ইমাম হুসাইনের (আ.) সাথে জীবন কাটিয়েছে এবং তাঁর মুসিবতে অশ্রু ঝরিয়েছে। তাই “اللهم اجعلنی عندک وجیهاً بالحسین” কেবল একটি বাক্য নয়; বরং এই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ দোয়া ও কর্মপন্থা।
আপনার কমেন্ট