রবিবার ১৭ আগস্ট ২০২৫ - ১০:২৩
মুমিনের ৫টি বৈশিষ্ট্য

ইরানের প্রখ্যাত ধর্মীয় বিশ্লেষক ও ইসলামী শিক্ষাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. নাসের রাফিয়ি বলেছেন, ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর বাণী অনুযায়ী একজন মুমিন ব্যক্তিকে পাঁচটি স্থানে চিহ্নিত করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো একাকীত্বে সতর্কতা ও তাকওয়া।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ড. রাফিয়ি তার এক সাম্প্রতিক বক্তৃতায় বলেন, “কোনো কাজ বা কথার দাবি করা সহজ; কিন্তু প্রকৃত কার্যকলাপ ও আমলে আমাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সাহসী মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রে, ধৈর্যশীল ও নম্র মানুষকে বিপদে, এবং উদার মানুষকে দান-খয়রে চিনে নেওয়া যায়।”

তিনি ইমাম জয়নুল আবেদিন ওরফে সাজ্জাদ (আ.) একটি রেওয়ায়াত উল্লেখ করে বলেন,

الْوَرَعُ‌ فِی‌ الْخَلْوَةِ وَ الصَّدَقَةُ فِی الْقِلَّةِ وَ الصَّبْرُ عِنْدَ الْمُصِیبَةِ وَ الْحِلْمُ عِنْدَ الْغَضَبِ وَ الصِّدْقُ عِنْدَ الْخَوْفِ

“মুমিন ব্যক্তির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে: একাকীত্বে তাকওয়া, দারিদ্র্যে দান, বিপদে ধৈর্য, রাগে ধীরতা এবং ভয়ে সততা।” [আল-কাওসুল হাকিম, হাদীস নং ৩৮৭]

একাকীত্বে তাকওয়া
একাকীত্বে তাকওয়া একজন মুমিনের প্রধান চিহ্ন। কারণ মানুষ জনসমক্ষে অন্যায় করতে পারে না, কিন্তু একাকী অবস্থায় যে কেউ ভুলের পথে যেতে পারে। যদি কেউ একাকীত্বে নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে, তবে জনগণের সামনে তার আচরণও সুশৃঙ্খল থাকে।

ভয়ে সততা
সততা ও সত্যবাদিতা একজন মুমিনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। উদাহরণ হিসেবে ইবনে যিয়াদ মিম্বর থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-কে অপমান করলে অন্ধ, সাহসী যোদ্ধা আব্দুল্লাহ বিন আফিফ সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং প্রতিবাদ করেছিলেন। তার সততার কারণে তিনি কারাবন্দি হন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হন। হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি বলেন, সততা কেবল বাক্যেই নয়, কর্ম ও দৃষ্টিতেও প্রকাশিত হওয়া উচিত।

বিপদে ধৈর্য
দূর্ভাগ্য বা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা একজন মুমিনের চিহ্ন। কান্না করা স্বাভাবিক, কিন্তু হাহাকার বা অন্যের প্রতি ঈর্ষা প্রকাশ করা ঠিক নয়।

দারিদ্র্যে দান
দারিদ্র্য বা অভাবের সময় দান ও সাহায্য প্রদান একজন সত্যিকারের মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এটি প্রমাণ করে, মানুষের উচিত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে নিজেকে পরীক্ষা করা।

রাগে ধীরতা
রাগ বা ক্রোধের সময় ধীরতা ও সহনশীলতা একজন মুমিনের চূড়ান্ত বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ, মদিনায় একজন ব্যক্তি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-কে অপমান করেছিলেন। ইমাম (আ.) অনুসারীদের অনুরোধে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন: “তুমি যদি সত্য বলো, আল্লাহ আমাদের মাফ করুন; যদি মিথ্যা বলো, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন।” এটি রাগের সময় ধীরতার অনন্য উদাহরণ।

ড. রাফিয়ি সমাপনীতে বলেন, “আমাদের নিজেদের পরীক্ষা করা উচিত—আমরা কি এই পাঁচটি গুণাবলীর অধিকারী? আমাদের একাকীত্বে তাকওয়া, ভয়ে সততা, বিপদে ধৈর্য, দারিদ্র্যে দান এবং রাগে ধীরতা রয়েছে কি না। আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেন এই গুণাবলী আমাদের ক্বলবের মধ্যে স্থাপিত হয়।”

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha