সোমবার ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:৪৩
ইমাম মাহদী (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর আবির্ভাব: জুলুম ও নিপীড়নের অবসান

মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই মানুষ মুক্তি, ন্যায়বিচার এবং শান্তির প্রত্যাশায় একজন ত্রাণকর্তার আগমনের আশায় পথ চেয়ে এসেছে। আব্রাহামিক তিনটি ধর্ম—ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদি ধর্ম—সর্বশেষ যুগে একজন ঐশি নেতা আসবেন, যিনি আল্লাহর ইচ্ছায় পৃথিবী থেকে জুলুম-অবিচার দূর করবেন এবং ন্যায় ও শান্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন—এই বিশ্বাসকে মৌলিক শিক্ষা হিসেবে ধারণ করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামে এ বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হলেন ইমাম মাহদী (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)। তাঁদের আবির্ভাব কেবল একটি ধর্মীয় ঘটনা নয়; বরং এটি মানবতার মুক্তির ইতিহাসের চূড়ান্ত অধ্যায়।

পবিত্র কুরআনের বাণী
যদিও কুরআনে সরাসরি “মাহদী” শব্দটি উল্লেখ নেই, তবে বহু আয়াতে পৃথিবী থেকে অন্যায় ও নিপীড়ন মুছে ফেলার খোদায়ি প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে এসেছে।
আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন: যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফতের অধিকার দান করবেন, দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন এবং ভয়ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করবেন।

এ আয়াতকে অনেক মুফাসসির ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগের সাথে সম্পর্কিত করেছেন, যখন আল্লাহর হুকুমে পৃথিবী ন্যায় ও শান্তিতে ভরে উঠবে।

আহলে বাইতের হাদিসে মাহদী (আ.)-এর আগমন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুতাওয়াতির হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: “যদি পৃথিবীর আয়ু মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে, আল্লাহ আমার আহলে বাইত থেকে এমন একজনকে প্রেরণ করবেন, যিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরে তুলবেন যেমনটি তা জুলুম ও অবিচারে ভরে গিয়েছিল।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস ৪২৮২)

এই হাদিস ইসলামী চিন্তাধারায় মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের দৃঢ় প্রমাণ।

হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তন
কুরআনে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করে বলা হয়েছে “তারা তাঁকে হত্যা করেনি, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাঁদের কাছে তাঁর সদৃশ করে দেওয়া হয়েছিল।” (সূরা নিসা: ১৫৭)

পরবর্তী আয়াতে (নিসা: ১৫৯) বলা হয়েছে যে কিয়ামতের আগে আহলে কিতাবের সবাই ঈসা (আ.)-এর প্রতি ঈমান আনবে। ইসলামি হাদিসে স্পষ্ট এসেছে, কিয়ামতের আগে হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, ইমাম মাহদী (আ.)-এর নেতৃত্বে জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবেন।

বাইবেল ও তাওরাতে ভবিষ্যদ্বাণী
ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থেও এক সর্বজনীন মুক্তিদাতার উল্লেখ আছে। বাইবেলে বলা হয়েছে, যীশু খ্রিস্ট পুনরায় পৃথিবীতে আসবেন, খোদায়ি শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন এবং অন্যায় ও দুর্নীতি দূর করবেন। তাওরাতেও শেষ যুগে একজন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়।

জুলুম থেকে ন্যায়বিচারের যুগে উত্তরণ
ইমাম মাহদী (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর আগমন শুধু কোনো ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এটি মানব সভ্যতার দীর্ঘ প্রত্যাশিত মুক্তি। তাঁদের যুগ–

▫️অন্যায়, শোষণ ও দুর্নীতি সমূলে নির্মূল হবে।
▫️মানব সমাজে সমতা, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।
▫️মানুষ আল্লাহর ইবাদতে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বে ও নিরাপত্তায় জীবন যাপন করবে।

ইসলামসহ আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে “মুক্তির যুগ” ধারণাটি কেবল আধ্যাত্মিক নয়, বরং একটি বাস্তব রাজনৈতিক-সামাজিক সত্য। মানবজাতি আজ যে নিপীড়ন, অবিচার ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে, তার অবসান ঘটবে ইমাম মাহদী (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর আবির্ভাবের মাধ্যমে। এ বিশ্বাস মুসলমানদের অন্তরে ধৈর্য, আশা ও সংগ্রামের প্রেরণা জোগায়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha