রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:১১
শহীদ নাসরুল্লাহ ছিলেন: বেলায়েত ফকিহে নিবেদিত ও আল্লাহর খাঁটি বান্দা

মজলিসে খোবরেগানের (নেতৃত্ব বিশেষজ্ঞ পরিষদ) সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেছেন: শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ছিলেন বেলায়েত ফকিহে বিলীন ও আল্লাহর একজন সৎ বান্দা, এবং তিনি সর্বদা অতিরঞ্জন ও অবহেলা থেকে বিরত থাকতেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ রবিবার দুপুরে আয়াতুল্লাহ আব্বাস কা‘বি ইমাম খোমেইনি (রহ.) ইনস্টিটিউটের শিক্ষকমণ্ডলী, গবেষক ও কর্মচারীদের সমাবেশে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, “মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে নিজ জীবনকে আল্লাহর পথে আটকে রাখে এবং তাঁর পথে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে।” শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ছিলেন এ হাদিসের সুস্পষ্ট উদাহরণ; এমন এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর সমগ্র সত্তা আল্লাহ ও বেলায়েতের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং কেবলমাত্র ঐশী দায়িত্বই তাঁকে সংগ্রামের ময়দানে নামতে উদ্বুদ্ধ করত।

মজলিসে খোবরেগানের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য আরও বলেন: অনেকেই জীবনের কেবল একটি অংশ ধর্মের পথে ব্যয় করে, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামী ব্যক্তি তাঁর সমগ্র জীবন জিহাদের জন্য উৎসর্গ করে দেন। শহীদ নাসরুল্লাহর অন্যতম উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য এটাই ছিল; তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল একজন মানুষ। যদিও আল্লাহর পথে জিহাদ সহজ নয়-শয়তানের প্রলোভন ও নফসের সংশয় পথকে কঠিন করে তোলে-তবুও শহীদ নাসরুল্লাহ কখনো দ্বিধায় পড়েননি; দৃঢ়তার সাথে তিনি ময়দানে অবতীর্ণ হন।

ইমাম খোমেইনি (রহ.) ইনস্টিটিউটের এ শিক্ষক শহীদ নাসরুল্লাহর জ্ঞানচর্চা ও সংগ্রামী জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন: ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর তিনি কুমে আসেন, মহান আলেমদের ফিকহের উন্নত পাঠে অংশ নেন এবং ইসলামী বিজ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন করেন; এমনকি আরবি সাহিত্যের শিক্ষকও ছিলেন। তিনি ছিলেন সুবক্তা ও চিন্তাশীল। লেবানন দখলের পর নাসরুল্লাহ জিহাদকে নিজের কর্তব্য মনে করে মাতৃভূমিতে ফিরে যান এবং নিজেকে প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি দুনিয়া বা আরামের কথা ভাবেননি; তাঁর একমাত্র চিন্তা ছিল দখলদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সত্যের পতাকা উড্ডীন রাখা।

আয়াতুল্লাহ কা‘বি বলেন: সেই দিনগুলোতে যখন ইসরাইল পুরো লেবানন দখল করে নিয়েছিল, তখন হিজবুল্লাহ সেই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়। লেবাননের সংগ্রামী আলেমদের প্রচেষ্টায়, বিশেষত শহীদ নাসরুল্লাহ ও সাইয়্যেদ সাফিউদ্দীনের মাধ্যমে প্রথম সামরিক ও আদর্শিক প্রশিক্ষণ ও সিয়োনিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, যা পরে হিজবুল্লাহ লেবাননের ভিত্তি স্থাপন করে; আজ এটি বিশ্বব্যাপী ঔদ্ধত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

মজলিসে খোবরেগানের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন: শহীদ নাসরুল্লাহ লেবানন, নাহফ ও কুমের হাওযার ফলশ্রুতি ছিলেন; একজন সৎ, যুক্তিবাদী, সম্মানিত ও বেলায়েত ফকিহে বিলীন মানুষ। তিনি মারাজে তাকলিদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং সর্বদা অতিরিক্ততা ও অবহেলা থেকে দূরে থাকতেন। একইসঙ্গে, শহীদ নাসরুল্লাহ ছিলেন আল্লাহর সৎ বান্দা, দোয়া ও আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষার সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি সর্বদা দু‘আ-ই-আবু হামজা সুমালি পাঠের উপর গুরুত্ব দিতেন এবং প্রকৃত অর্থে নিজেকে ইমাম জামান (আ.)-এর সৈনিক মনে করতেন।

তিনি আরও বলেন: নাসরুল্লাহর শাহাদাত কেবল একটি জীবনের সমাপ্তি নয়, বরং দায়িত্ব পালনের চূড়ান্ত রূপ। তিনি ফিলিস্তিনকে সাহায্য করা, হামাসকে সমর্থন করা এবং “তুফানুল আকসা” আন্দোলনের সঙ্গে থাকা-এসবকেই নিজের ঐশী দায়িত্ব মনে করতেন। যদিও তিনি নীরব থাকতে পারতেন, তাঁর মহান আত্মা লেবাননের সীমান্ত অতিক্রম করে সমগ্র উম্মতের জন্য সংগ্রামের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল।

আয়াতুল্লাহ কা‘বি স্পষ্ট করে বলেন: শহীদ নাসরুল্লাহ সর্বদা চেষ্টা করেছেন যাতে লেবানন গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে। এমনকি লেবাননের খ্রিস্টানরা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীও তাঁর প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টার কারণে গুরুতর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha