শনিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:১৫
জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে হামাসের তীব্র প্রতিক্রিয়া: “মিথ্যাচার ও গণহত্যা অস্বীকার করতে পারবে না”

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দখলদার ও গণহত্যাকারী অবৈধ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে “অবৈধ ও মিথ্যাচারে ভরা” হিসেবে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছে। হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশের প্রতিনিধিরা তার বক্তৃতা বর্জন করায় নেতানিয়াহু একাকী ও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়েছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বিবৃতিতে নিম্নবর্ণিত প্রধান দিকগুলো জোর দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে—

• বিস্ময়ের বিষয়—একজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে জাতিসংঘের মঞ্চে “ন্যায়, মানবিকতা ও মানবাধিকারের” ওপর বক্তৃতা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, অথচ তিনি প্রতিদিনই গাজায় এসব নীতির অবমাননা করে চলেছেন।

• নেতানিয়াহুর মিথ্যা দাবি কেবলই গাজায় তার গণহত্যা ও জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি কিংবা সংগঠিত অনাহারের ঘটনার জবাবদিহিতা এড়ানোর চেষ্টা। তার এই মিথ্যাচার জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া প্রমাণ-উপাত্তকে অচল করতে পারবে না।

• ৭ অক্টোবরের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে চালানো তার ভুল এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা শুধু অতীতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা; বিশেষত তখনই যখন সেসব বিবরণ বিশ্বজনমতের সামনে ধসে পড়েছে।

• তিনি ‘ইহুদিবিরোধিতা’-র মতো শব্দকে অযৌক্তিকভাবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে মুখাবরন করার চেষ্টা করছেন— এতে করে গত ২৩ মাস ধরে গাজায় চলমান গণহত্যা ও অনাহারের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে যে প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে, তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।

• নেতানিয়াহুর নিঃখুঁত ভানী—ইসরায়েলি বন্দীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশের নকল অভিনয় এবং লাউডস্পিকারে তাদের উদ্দেশে বার্তা জানানো—একে তিনি একজন ঔপনিবেশিক মনোভাবাপন্ন নেতার দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে দেখিয়েছেন। হামাস বলেছে, নেতানিয়াহুই আসলে বন্দিদের মুক্তি নিয়ে যে সমঝোতা ঘটতে পারত তা বিঘ্নিত করেছেন; গত জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তি তিনি ভঙ্গ করেছেন এবং কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিদলের ওপর হত্যাচেষ্টা পর্যন্ত চালিয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে যে হামাসের সংগ্রাম শুধুমাত্র দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে; তাদের লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও মুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা। গাজার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বা কোনও পুতুল সরকার বসানোর নিতান্ত কল্পনাকে হামাস বাস্তবসম্মত নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং পুনরাবৃত্তি করেছে যে ফিলিস্তিনি জাতি কোনো রকম উপনিবেশতা বা বিদেশী আধিপত্য মেনে নেবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক দেশের প্রতিনিধিরা নেতানিয়াহুর বক্তৃতা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এটি তার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার অপার গভীরতা প্রতিফলিত করে এবং একই সঙ্গে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনি আত্মনির্ধারণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি শক্তিশালী সহমর্মিতাকে।

হামাস দৃঢ়ভাবে বলেছে যে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা—যার রাজধানী কুদস—একটি অপরিবর্তনীয় ও অদম্য অধিকার; ইসরায়েলি আগ্রাসন ও তার নীতিনির্ধারণীদের কোনো ফ্যাসিবাদী প্রচেষ্টা এটিকে মুছে ফেলতে সমর্থ হবে না। ফিলিস্তিনি জাতি তাদের ভূমির প্রতি অনড়, এবং তারা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha