হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইয়াসিন মুসাভি বলেছেন, “বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ইসরাইল ও তার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের শর্তসমূহের সামনে আত্মসমর্পণ।”
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতি “ইসলামী প্রতিরোধের সুস্পষ্ট বিজয় এবং ফিলিস্তিনি জাতির দৃঢ় অবস্থানের ফলাফল।”
আয়াতুল্লাহ মুসাভি আরও বলেন, “আজ আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা গত দুই বছরের ধারাবাহিক প্রতিরোধ ও গাজাবাসীর অসীম ত্যাগ ও আত্মদানের ফল। এই সময়ে দুই লক্ষ ষাট হাজারেরও বেশি মানুষ শহিদ, আহত বা পঙ্গু ও গৃহহীন হয়েছেন।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যুদ্ধবিরতির অর্থ এই নয় যে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার শেষ হয়েছে; বরং এটি অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনীয়তাকে আরও তীব্রভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।”
ইরাকের এই শীর্ষ আলেম ট্রাম্পের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “যিনি ইসরাইলি হত্যাযন্ত্রকে অস্ত্র, রাজনৈতিক আশ্রয় ও গণমাধ্যমের প্রচারে সহায়তা করেছেন, তিনি কখনো শান্তির দূত হতে পারেন না।”
তার ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্রই এই অঞ্চলের অশুভ শক্তির জননী— এবং ইসরাইলকে এই সব নৃশংসতার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে।”
আয়াতুল্লাহ মুসাভি কিছু আরব দেশ ও তুরস্কের ভূমিকার প্রতিও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই দেশগুলো আমেরিকা ও ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তারা হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার ভয়ে নীরব থেকে কার্যত আগ্রাসনের সহযোগী হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, উপসাগরীয় কিছু দেশ এখন বুঝতে পারছে যে যুক্তরাষ্ট্র আর তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়। ফলে তারা রাশিয়া, চীন ও ইরানের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতার পথে অগ্রসর হচ্ছে। তার মতে, “এই পরিবর্তন প্রমাণ করে তারা অবশেষে উপলব্ধি করেছে— ওয়াশিংটনের ওপর অন্ধ নির্ভরতার যুগ শেষ।”
যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চুক্তিতে ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার ও কিছু ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “নেতানিয়াহুর ওপর ভরসা করা যাবে না, কারণ যে কোনো মুহূর্তে সে নতুন করে আগ্রাসন শুরু করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “চুক্তির কোথাও হামাস বিলুপ্তির কোনো কথা নেই; বরং প্রতিরোধ আজও শক্তি ও অস্ত্রসহ দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।”
আয়াতুল্লাহ মুসাভি বলেন, “বিজয়কে শহিদের সংখ্যায় নয়, বরং কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে মাপা হয়। প্রতিরোধ তার শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে এবং শত্রুর ধ্বংস পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করেছে— এটিই প্রকৃত বিজয়।”
বাগদাদের জুমার ইমাম প্রতিরোধের নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করে বলেন, “তারা জাতির স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, অথচ ইসরাইল, তার সব প্রচারযন্ত্র থাকা সত্ত্বেও, গভীর মনোবল ও কৌশলগত পরাজয়ের মুখে পড়েছে।”
খুতবার এক পর্যায়ে আয়াতুল্লাহ মুসাভি “নতুন মধ্যপ্রাচ্য” প্রকল্পের বিরুদ্ধেও সতর্কবার্তা দেন— যা আরব দেশগুলোর বিভাজন ও ইসরাইলের প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরাইলকে ব্যবহার করে যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখতে চায়। এর মোকাবিলার একমাত্র পথ হলো আঞ্চলিক ঐক্য ও অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি।”
শেষে তিনি মুসলিম ও আরব দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন শক্তি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যদি আমরা মুসলমান ও আরবরা ঐক্যবদ্ধ থাকতাম, তাহলে ট্রাম্প তো দূরের কথা, ইসরাইলও গাজায় একটি শিশুকেও হত্যা করার সাহস পেত না।”
তিনি আরও বলেন, ইরাকের জনগণকে আসন্ন নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ “এই নির্বাচনই নির্ধারণ করবে ইরাকের ভবিষ্যৎ— স্থিতিশীলতা নাকি বিশৃঙ্খলা।”
আপনার কমেন্ট