বৃহস্পতিবার ১৬ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:১৫
গাজা যুদ্ধবিরতি যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, এটি কেবল এক সাময়িক বিরতি

দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর গাজায় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তা মূলত একটি সাময়িক বিশ্রাম, স্থায়ী সমাধান নয় — এমন মত দিয়েছেন মিশরীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক মুহাম্মাদ সাইয়্যেদ আহমেদ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: তিনি তেহরান টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সামরিক হামলা বন্ধ ও মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হলেও, দখল, বাস্তুচ্যুতি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার—এই মূল ইস্যুগুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

যুদ্ধবিরতির তাৎপর্য
আহমেদ বলেন, “এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি এক শ্বাস নেওয়ার সময়। দুই বছর ধরে ইসরায়েল তাদের ঘিরে রেখে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এখন লড়াই থামায় তারা সামান্য স্বস্তি পেয়েছে। তবে এটি যুদ্ধের শেষ নয়; এ সংঘাত অস্তিত্বের, সীমান্তের নয়।”

তার মতে, ইসরায়েল তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি — ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ বা প্রতিরোধ ধ্বংস — যা নিজেই প্রতিরোধের বিজয়।

কেন উভয় পক্ষ চুক্তিতে এল
তিনি বলেন, ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও মনোবল ভাঙনের কারণে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক জনমতও ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে; সন্ত্রাসবাদের প্রচার ভেঙে পড়ে, ফিলিস্তিনিরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পায়।

অন্যদিকে, হামাসও ব্যাপক প্রাণহানি, ধ্বংস ও মানবিক সংকটের কারণে এই চুক্তি মেনে নিয়েছে।

ট্রাম্পের “২০ দফা পরিকল্পনা” প্রসঙ্গে
আহমেদ এই পরিকল্পনাকে “সায়োনিস্ট স্বার্থরক্ষার প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটি গাজায় আন্তর্জাতিক প্রশাসন চাপিয়ে দিয়ে প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তৈরি। তবে হামাস অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের স্বাধীন অবস্থান রক্ষা করেছে।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও ভবিষ্যৎ সংঘাত
আহমেদের মতে, এই পরিকল্পনা মূল সমস্যার সমাধান দেয় না— এটি শুধু সময়ক্ষেপণ। “দখলদারিত্বের অবসান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকৃত শান্তি সম্ভব নয়,” তিনি বলেন।

তিনি সতর্ক করেন, ইসরায়েল এখনো সম্প্রসারণবাদী ভাবনা পোষণ করে— “নাইল থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত”— এবং এটি কেবল ফিলিস্তিন নয়, পুরো আরব বিশ্বের জন্য হুমকি।

টনি ব্লেয়ারের প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধান ও মিশরের অবস্থান
গাজায় টনি ব্লেয়ারের প্রশাসনিক প্রস্তাব মিশর ও আরব বিশ্ব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, আহমেদ জানান। তার মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ কেবল ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকতে হবে। বিদেশি প্রশাসন মানে হবে ফিলিস্তিনি ইস্যুর বিলুপ্তি।

মিশরের ভূমিকা
তিনি বলেন, মিশরের ভূমিকা কেবল মধ্যস্থতাকারীর নয়, বরং সিদ্ধান্তমূলক। যখন ইসরায়েল সিনাইয়ে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে, তখন মিশর একে নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখে এবং সামরিকভাবে প্রস্তুতি নেয়।
ইসরায়েল মিশরের দৃঢ় অবস্থান বুঝে পিছু হটে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
প্রফেসর আহমেদ মনে করেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির সূচনা নয়। “এটি শুধু নতুন সংঘাতের আগে একটি বিরতি,” বলেন তিনি। “এই লড়াই অস্তিত্বের, সীমান্তের নয়। প্রতিরোধের পুনর্গঠন ও ঐক্যের মাধ্যমেই মুক্তি সম্ভব।”

 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha