হাওজা নিউজ এজেন্সি: যখন আপনার স্ত্রী আপনার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে, তখন প্রথমেই শান্তভাবে ও কোনো রকম বিচার না করে তার বিরাগের কারণ জানতে চেষ্ট করুন। এরপর, তার অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে আপনার পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কেও খোলাখুলি কথা বলুন। শেষ পর্যন্ত, ছোট ছোট পদক্ষেপ ও ধৈর্যশীল সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।
প্রশ্ন: তিন বছর ধরে আমার স্ত্রী আমার পরিবারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছে না। এ অবস্থায়, ধাপে ধাপে এই সম্পর্কের উন্নতির জন্য আমি কী করতে পারি?
উত্তর: এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো, যা আপনাকে এই অবস্থা উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে:
১. প্রথমেই, আপনার স্ত্রীর বিরাগের মূল কারণটি সঠিকভাবে খুঁজে বের করুন।
শান্তভাবে এবং তাকে বিচার না করে তার কাছে জিজ্ঞেস করুন ঠিক কী ঘটেছে। তাকে বলুন সে যেন সুনির্দিষ্ট করে জানায়, কখন এবং কী কারণে সে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল।
যেমন প্রশ্ন করতে পারেন: “কী বিষয় তোমাকে কষ্ট দিয়েছে?” অথবা “কখন থেকে তুমি এই বিরক্তি অনুভব করছো?”
এভাবে জানা যেতে পারে সমস্যার মূল কারণ হয়তো কোনো সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি।
২. তার অনুভূতিকে সম্মান করুন, বুঝুন এবং পাশে থাকুন।
তার নেতিবাচক অনুভূতির প্রতি সম্মান জানানো প্রয়োজন। ক্রোধ, দুঃখ বা বিরক্তি যা সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হয়েছে, তা বোঝা এবং মেনে নেওয়া জরুরি। অনেক সময় এমন অনুভূতি কথা না বলেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই আগে আপনার স্ত্রীর জীবনে তার গুরুত্ব বোঝান এবং তাকে জানান তার অনুভূতি আপনার কাছে মূল্যবান।
৩. এরপর, আপনার পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে স্নেহ ও যুক্তির মাধ্যমে কথা বলুন।
তার অনুভূতি ও বিরক্তির কথা শুনে, আপনি একটি মমতাপূর্ণ ভাষায় তাকে বুঝাতে পারেন যে আপনার পরিবারও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন আপনার পরিবারের নাম শুনলে সে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়।এই প্রতিক্রিয়া হয়তো পুরনো কষ্ট কিংবা ভুল বোঝাবুঝির কারণে!
এই পরিস্থিতিতে আপনি বলতে পারেন: “প্রিয়, তুমি আমার জন্য খুবই মূল্যবান। আমি জানি তুমি আমার পরিবার নিয়ে কষ্টে আছো এবং হয়তো এ বিষয়ে কথা বলতে চাও না, কিন্তু এটি আমাকেও ব্যথা দেয়। আমি এমন অবস্থায় থাকতে চাই না যেখানে আমাকে তোমার আর আমার পরিবারের মধ্যে বেছে নিতে হয়। আমি বিশ্বাস করি সম্পর্ক ছিন্ন করার চেয়ে তা মেরামত করাটাই আমার দায়িত্ব।”
৪. এরপর সমাধান খুঁজতে তাকে অংশীদার করুন।
তাকে জিজ্ঞেস করুন: “তুমি কী মনে করো, আমি কী করলে পরিস্থিতি আরও ভালো হতে পারে?” অথবা “তুমি চাও এই সম্পর্ক কীভাবে ধাপে ধাপে আবার তৈরি হোক?”
এভাবে তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে, সে সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে এবং সহযোগিতায় আগ্রহী হবে।
৫. অবশেষে, ছোট ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপে সম্পর্ক গড়ার কাজ শুরু করুন।
যেহেতু তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে সম্পর্ক বন্ধ আছে, তাই হঠাৎ করে পুরোপুরি পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়।
শুরুটা হোক ছোট ও নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যে। যেমন, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান (মিলাদ, মাহফিল, ইত্যাদি) থাকলে বলুন: “চলো শুধু কিছু সময়ের জন্য যাই, কোনো কথাবার্তা বা ঘনিষ্ঠতা না হলেও চলবে।”
‘তোমাকে অবশ্যই যেতে হবে’ বা ‘আমরা এখন থেকে সব সময় যাব’—এমন চাপ সৃষ্টিকারী কথা বলবেন না।
ধৈর্য ধরুন, সময় দিন—হয়তো এক, দুই বা তিন মাস সময় লাগবে তাকে প্রস্তুত হতে। কিন্তু যখন সে বুঝবে আপনি তার পাশে আছেন, তখন তার নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
বাস্তবতা হলো, সব মানুষই যখন অনুভব করে যে তারা কারো বোঝা হচ্ছে না এবং প্রিয়জনের সমর্থন পাচ্ছে, তখন তারা ভালো অনুভব করে এবং সম্পর্ক মেরামতের ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী হয়।
আপনার কমেন্ট