হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের আরাক প্রদেশের দেলিজানের ফাতিমা মাসুমা মহিলা হাওযা-র প্রধান রহিমা কান্বারি- শহীদ রায়িসি ও অন্যান্য “শহীদানে খেদমত”-এর শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এক হৃদয়স্পর্শী স্মরণ-প্রবন্ধ লিখেছেন:
যখন রাতের গভীরতা নিস্তব্ধ পৃথিবীতে নেমে আসে, তখন সেই অন্ধকার ছিন্ন করে আকাশে উদিত হয় শহীদ রায়িসির নাম—ভালোবাসা, ত্যাগ ও নিষ্কলুষ সেবার এক দীপ্ত নক্ষত্র হয়ে।
তিনি ছিলেন এক উচ্চাভিলাষী আত্মা, যিনি মানুষের কল্যাণে আত্মত্যাগ করে গেছেন, মানবিক মূল্যবোধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি ছিলেন দেশপ্রেমের এক নিঃস্বার্থ প্রতীক, যিনি পরিশ্রমকে ক্লান্ত করে তুলেছিলেন!
তার অবদান, যেন শীতার্ত রাতের উষ্ণতা; আশা হারানো প্রাণে তিনি জাগিয়েছিলেন নতুন আশার আলো।
অত্যন্ত সীমিত সামর্থ্য নিয়ে, নানা বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হয়েও, তিনি হাতে নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক দায়িত্ব। তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়নি।
তার একটিমাত্র হাসি বহু নিরাশ হৃদয়ে ফিরিয়ে এনেছিল জীবনের স্পন্দন।
তিনি গড়েছেন বিদ্যালয়, নির্মাণ করেছেন হাসপাতাল, তরুণ ও নারীদের জন্য সৃষ্টি করেছেন উন্নয়নের সুযোগ,নসংস্কৃতি ও শিল্পের হারানো প্রাণে ফিরিয়ে এনেছেন প্রাণচাঞ্চল্য, আবার সচল করেছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
এই সকল কর্মযজ্ঞই সাক্ষ্য দেয় তার অটল প্রত্যয় ও দেশপ্রেমের।
আজ, প্রতিটি দায়িত্ববান ও দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে তার স্মৃতি গেঁথে আছে অমলিনভাবে।
তার কণ্ঠ যেন এখনো প্রতিধ্বনিত হয় দেশের প্রতিটি কোণে: “আমরা দায়বদ্ধ আগামী প্রজন্মের প্রতি।”
তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন—জীবন আমাদের নিজ হাতে গড়া, এবং একতা, সহানুভূতি ও সাহসিকতার মাধ্যমে আমরাই লিখতে পারি আমাদের ভবিষ্যতের ইতিহাস।
তার পবিত্র আত্মা আজ আকাশে বিচরণ করলেও, আমাদের চেতনায় তিনি জীবন্ত। তিনি যেন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন—কোনো ত্যাগ কখনো নিষ্ফল যায় না।
তবু, তার চলে যাওয়া আমাদের হৃদয়ে একটি গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে—একটি বছর কেটে গেল সেই শূন্যতার ভারে নুয়ে থেকে। হ্যাঁ, তার অনুপস্থিতি প্রতিনিয়ত আমাদের অনুভব করায় তার প্রগাঢ় প্রভাব। কিন্তু এই শোকই আমাদের দায়িত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়: আমরাই তার পথচলার উত্তরসূরি।
আজ আমাদের কর্তব্য—তার আদর্শ অনুসরণ করা, তার রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া,
আর দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
শহীদ রায়িসি, আপনার নিরলস সেবার পদচিহ্ন আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অম্লান থাকবে।
আপনার কণ্ঠ আজও আমাদের চেতনায় অনুরণিত, আর আপনার আদর্শ আমাদের চিন্তা ও কর্মপথে হয়ে থাকবে আলোর দিশারি।
চলুন, প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করে নতুন করে অঙ্গীকার করি—একটি সমৃদ্ধ, আলোকোজ্জ্বল আগামী গড়ে তোলার।
আপনার কমেন্ট