হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের আহওয়াজে অবস্থিত জামেয়া-ই-আল-যাহরা (সা.আ.) মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় শিক্ষিকা, সাইয়্যেদা তায়্যেবা মুসাভি জাজায়েরি এক সাক্ষাৎকারে “পরিবারে নারীর লজ্জাশীলতা ও হিজাবের ভূমিকা” শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, কুরআন ও ইলহামী ধর্মীয় শিক্ষায় পরিবারকে সমাজের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নারীর পবিত্রতা ও পর্দা এ ভিত্তিকে রক্ষা ও সুদৃঢ় করার অপরিহার্য উপাদান।
হিজাব: প্রকৃতি ও মানসিক সুস্থতার প্রতিফলন
মুসাভি জাজায়েরি বলেন, “মানসিক সুস্থতা হলো এমন এক অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য, যা ব্যক্তি জীবনকে আত্মগঠনের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো: হিজাব কি মানুষের ওপর আরোপিত এক বিধান, না কি এটি মানব স্বভাব ও ফিতরাতের অন্তর্গত একটি স্বাভাবিক চাহিদা?”
তিনি জবাব দেন, “ইলহামী সব ধর্মেই পর্দা ও শালীনতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা কালের বিষয় নয়। এমনকি কুরআনেও আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর কাহিনিতে আমরা দেখি, নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করার পর তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পায় এবং তারা গাছের পাতা দিয়ে শরীর ঢেকে নেয়—যা প্রমাণ করে যে লজ্জাশীলতা ও শরীর ঢাকার প্রবণতা মানুষের সহজাত।”
তিনি যুক্ত করেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, হিজাব একটি প্রকৃতিগত ও স্বভাবজাত বিষয়, আর বেহায়াপনা প্রকৃতির বিপরীতমুখী এক বিচ্যুতি।”
হিজাব ও মানসিক নিরাপত্তা
তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। ইসলামে হিজাব নারীর মানসিক নিরাপত্তা ও স্থিতি রক্ষার জন্য একটি সুরক্ষা-বর্ম হিসেবে বিবেচিত। মনোবিজ্ঞানে দেখা গেছে, নারীরা আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হওয়ার কারণে সহজেই পারিপার্শ্বিক প্রভাবে প্রভাবিত হন। বহির্জগতের অগণিত দৃষ্টি ও অপার নিয়ত তাঁর মনে উদ্বেগ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, যখন একজন নারী নিজেকে পর্দার মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন এবং শুধুমাত্র বৈধ ও নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক থেকে মনোযোগ গ্রহণ করেন, তখন তিনি মানসিকভাবে অধিক নিরাপদ ও প্রশান্ত বোধ করেন।”
কুরআন ও হাদীসের আলোকে হিজাব
তিনি কুরআনের সূরা আহযাবের ৫৩ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন,
یَا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُیُوتَ النَّبِیِّ إِلَّا أَنْ یُؤْذَنَ لَکُمْ إِلَیٰ طَعَامٍ غَیْرَ نَاظِرِینَ إِنَاهُ وَلَٰکِنْ إِذَا دُعِیتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِینَ لِحَدِیثٍ إِنَّ ذَٰلِکُمْ کَانَ یُؤْذِی النَّبِیَّ فَیَسْتَحْیِی مِنْکُمْ وَاللَّهُ لَا یَسْتَحْیِی مِنَ الْحَقِّ ۚ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَٰلِکُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِکُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚ وَمَا کَانَ لَکُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْکِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَٰلِکُمْ کَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِیمًا
…যখন তোমরা নবীর স্ত্রীদের কাছে কিছু চাও, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটাই তোমাদের অন্তর ও তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্র…
এই আয়াত স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, পর্দা নারীর ও পুরুষের উভয়ের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং মানসিক সুস্থতার ভূমিকা পালন করে।
একইভাবে, আমিরুল মু’মিনিন ইমাম আলী (আ.) বলেন,
صیانه المراه انعم لحالها و ادوم لجمالها
“নারীর সংরক্ষণই তার জন্য অধিক কল্যাণকর এবং তার সৌন্দর্য ও মানসিক ভারসাম্যের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।” [গুরারুল হিকাম, অনুচ্ছেদ- ৪৪, হাদীস- ১০]
সাইয়্যেদা মুসাভি জাজায়েরি বলেন, “ধর্মীয় শিক্ষায় বাহ্যিক পোশাক ও পর্দা, নারীর অভ্যন্তরীণ লজ্জাশীলতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার প্রতিফলন। যে সমাজে নারীরা মানসিকভাবে নিরাপদ, সেখানকার পরিবারগুলো শান্তিপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ ও দৃঢ় হয়। এধরনের পরিবারই একটি সহনশীল ও রক্ষা-ক্ষমতাসম্পন্ন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।”
আপনার কমেন্ট