রবিবার ২৭ জুলাই ২০২৫ - ১১:০৪
শিশুদের মধ্যে আশুরার শিক্ষা পৌঁছাতে প্রয়োজন কার্যকর পন্থা: গল্প, কর্ম ও সংযোগ

ইরানের একজন শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় বক্তা মাসুমা সাদাত তাবাতাবাই বলেছেন, আশুরার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা শিশুদের মাঝে পৌঁছাতে হলে শুধু কথা নয়, প্রয়োজন চিন্তাপূর্ণ গল্প বলার কৌশল, বাস্তব জীবনের উদাহরণ এবং আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শিক্ষা শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির জন্য নয়; এটি একটি সার্বজনীন মানবিক বার্তা, যা মর্যাদা, প্রতিরোধ এবং নৈতিকতার প্রতিচ্ছবি।

তিনি বলেন, “আশুরার বার্তা কোনো একক সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৈশ্বিক আহ্বান—মানবতার জন্য এক বিশুদ্ধ শিক্ষা।”

নৈতিক শিক্ষা কর্মের মাধ্যমে প্রচারিত হয় বক্তৃতার মাধ্যমে  নয়
ইমাম হুসাইন (আ.) ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শহীদ হন। তাঁর সাহসী অবস্থান নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ স্বল্পসংখ্যক সঙ্গীদের নিয়ে একটি ঐতিহাসিক চেতনায় রূপ নিয়েছে—যা আজও শিয়া পরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক।

তাবাতাবাই বলেন, “ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বিপ্লবের মূল ভিত্তি ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, ন্যায়বিচার এবং তাওহিদ—যা সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য শিক্ষা। যদি আমরা জাতি ও অঞ্চলভিত্তিক সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারি, তবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আরও কাছে যেতে পারি।”

তিনি বলেন, “শিশুরা আমাদের বলা নয়, আমাদের কর্ম দেখে শিখে। তাদের মনে গভীর ছাপ পড়ে আমাদের আচরণের মাধ্যমেই।” এ প্রসঙ্গে তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেন:
“তোমরা যা করো না, তা কেন বলো?” (সূরা আস-সাফফ, ৬১:২)

শৈশব থেকেই শুরু হোক আত্মিক গঠন
তিনি পরামর্শ দেন, শিশুদের মধ্যে ন্যায়বোধ, সততা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া যেন শৈশব থেকেই শুরু হয়। “শিশুর পরিণত হবার জন্য অপেক্ষা নয়, বরং তার সঙ্গে আত্মিক যাত্রা শুরু করুন শুরু থেকেই।”

তিনি কারবালার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধের আগের রাতে ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর অনুসারী ও শিশুদেরও—চলে যাওয়ার স্বাধীনতা দেন। “এটি আমাদের শেখায় যে শিক্ষায় স্বাধীন ইচ্ছা ও পছন্দ গুরুত্বপূর্ণ; জোর বা ভয় নয়, বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে।”

গল্প বলার মাধ্যমে শিশুদের হৃদয়ে ধর্মীয় পরিচয় গড়ে তোলা
তিনি সতর্ক করেন যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অতিরঞ্জিত বা অতি নাটকীয় উপস্থাপনা শিশুর মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই বয়স অনুযায়ী ভারসাম্যপূর্ণ ও সংবেদনশীল গল্প বলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, “শিশুরা যখন রুকাইয়া বা হযরত আলী আসগরের মতো শিশু শহীদদের গল্প শোনে, তখন তারা নিজেদের সেই গল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। এভাবেই ধর্মীয় পরিচয় স্বাভাবিক ও গভীরভাবে গড়ে ওঠে।”

তিনি আরও বলেন, “গল্প শুধু তথ্য দেয় না, এটি সত্যের অনুভব শেখায়। একটি শিশু যখন গল্পের ভেতর থেকে মূল্যবোধ উপলব্ধি করে, তখন তা তার অন্তরেই গেঁথে যায়।”

আত্মত্যাগ নয়, দৃঢ়তা—আহলে বাইতের মর্যাদা তুলে ধরুন যথাযথভাবে
তিনি শেষ কথায় বলেন, শিশুদের মনে ধর্মীয় ঘটনা বর্ণনার সময় দুঃখের উপাদানকে অতিরিক্তভাবে না বাড়িয়ে, আহলে বাইতের মর্যাদা, আত্মমর্যাদা ও দৃঢ়তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

“আহলে বাইত (আ.) কষ্ট সহ্য করেছেন, কিন্তু তা করেছেন অসীম মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। আমরা তাঁদের শুধু নির্যাতিত হিসেবে নয়, সাহসী ও নীতিবান নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবেই শিশুদের সামনে তুলে ধরতে চাই—কারণ শহীদ হওয়া মানেই আল্লাহর পথে সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।”

আশুরার শিক্ষা শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হলে শুধুমাত্র বক্তৃতা বা দুঃখের গল্প নয়—জরুরি বাস্তব কর্ম, হৃদ্যতা, সচেতন গল্প বলা এবং আন্তরিক সম্পর্ক। এই পন্থাগুলোর মাধ্যমেই শিশুরা ন্যায়, আত্মত্যাগ ও সত্য উপলব্ধি করতে শেখে এবং গড়ে তোলে এক দৃঢ় ধর্মীয় পরিচয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha