গৃহিণীর সম্মতি ছাড়া আতিথেয়তা কি বৈধ?

মেহমানদারি বা অতিথি আপ্যায়ন একটি প্রশংসনীয় গুণ। তবে, কখনও এমনটা দেখা যায় যে, গৃহিণীর সম্মতি না নিয়েই অতিথি আপ্যায়ন করা হয়; অথচ শরিয়তের দৃষ্টিতে গৃহিণী গৃহকর্মে বাধ্য নন, বরং এসব কাজ তাঁর ইচ্ছা ও সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। অতিথি আগমনের অজুহাতে একজন নারীর ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া একধরনের অবিচার হতে পারে। যে আতিথেয়তা অন্য কাউকে কষ্ট দেয়, তা আর সত্যিকার অর্থে আতিথেয়তা থাকে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: শহীদ অধ্যাপক মুর্তজা মুতাহহারি তাঁর এক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন, যা শ্রদ্ধেয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হলো:

“আমাদের অনেকের একটি স্বভাব রয়েছে, বা আমরা নিজেদের ওপর এমন একটা বৈশিষ্ট্য আরোপ করি এবং সেটার নাম দেই ‘আতিথেয়তা’। আমরা বলি, আমরা পুরুষ, আর পুরুষের ঘরের দরজা খোলা থাকে! সবসময় কোনো না কোনো অতিথি আসে, কেউ যায়।

দুপুর ও রাতের খাবারে অতিথি থাকে, এমনকি রাতযাপনকারী অতিথিকেও ঘরে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এই আচরণ নিজে খুব একটা খারাপ নয়, তবে একটি বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত।

অনেক সময় এমন হয় যে, আমাদের ঘরে যে নারী (স্ত্রী) থাকেন– যার ওপর আমাদের শরিয়ত অনুযায়ী জোরপূর্বক কোনো আদেশ জারি করার অধিকার নেই এবং যিনি স্বাধীনভাবে ও নিজ ইচ্ছায় গৃহকর্মে সর্বাত্মক সহায়তা করে থাকেন– তার ওপর আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও পরিশ্রম আরোপ করি।

আর এটিকেই আমরা ‘আতিথেয়তা’ বলে থাকি!গর্ব করে বলি, আমাদের ঘরের দরজা খোলা, আমরা অতিথিপরায়ণ!

কিন্তু যে আতিথেয়তার ফলে একজন মানুষের ওপর জুলুম হয়, তা কোনোভাবেই আতিথেয়তা নয়।”

[শিক্ষা: এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ধর্মীয় নৈতিকতা শিখি যে, আতিথেয়তা মহৎ গুণ, তবে তা যদি অন্যের স্বাধীনতা বা স্বস্তিকে হরণ করে, তবে তার পবিত্রতা হারিয়ে ফেলে।

স্ত্রী বা গৃহিণীকে সম্মান ও সহমর্মিতা দেখানো প্রতিটি স্বামীর দায়িত্ব।

ঘরের কাজে নারীর অংশগ্রহণ তার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল— এটি কোনো বাধ্যবাধকতা নয়।

সত্যিকারের আতিথেয়তা হলো এমন, যা সবাইকে সম্মান ও প্রশান্তি দেয়—কাউকে কষ্ট দিয়ে নয়।

এই শিক্ষাটি আজকের সমাজে পরিবারে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।]

সূত্র: ইনসানে কামেল (পরিপূর্ণ বা আদর্শ মানুষ), পৃষ্ঠা- ২৬৩

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha