বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫ - ১১:০১
গাদীর খুমে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি

গাদীর খুমে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর আবু বকরকে কেন খিলাফতের জন্য বাইআত করা হলো?

প্রশ্ন: যদি গাদীর খুমে হাজার হাজার লোক উপস্থিত ছিল, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর আবু বকরকে কেন বাইআত করা হলো?
প্রশ্নকারী: বেহরামী
প্রশ্নের ব্যাখ্যা:
শিয়াদের মতে, গাদীর খুমে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর আবু বকরকে কেন খিলাফতের জন্য বাইআত করা হলো?
তাহলে কি সেই সমস্ত মানুষ রাসুলের কথা কয়েক দিনের মধ্যেই ভুলে গিয়েছিল?
উত্তর:
যারা গাদীর খুমে উপস্থিত ছিলেন, তারা কেউই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা ভুলে যাননি। তবে কেউ কেউ প্রাণ ও সম্পদের ভয়ে, কেউ আবার দুনিয়ার লোভ ও পদমর্যাদার কারণে, কিংবা কেউ কেউ আমিরুল মু’মিনিন আলি (আ.)-এর প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসার কারণে অজ্ঞানের ভান করেছিল। যেমন প্রসিদ্ধ আহলে সুন্নাত আলেম ইমাম গাজালী, ওমর ইবনে খাত্তাবের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন:
"তিনি (রাসুল) যেদিন গাদীর খুমে ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন সকলের ঐকমত্যে তিনি বলেছিলেন: ‘যার আমি মাওলা, আলিও তার মাওলা।’ তখন ওমর বলেছিলেন: ‘বাহ বাহ হে আবুল হাসান! আপনি আজ থেকে আমার এবং প্রত্যেক মুমিনের মাওলা হয়ে গেলেন।’ এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃতি, সন্তুষ্টি এবং সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। কিন্তু তারপর হাওয়া-এ-নফস তাদের উপর জয়লাভ করে, নেতৃত্বের মোহ, খিলাফতের ভার, নবুয়তের বন্ধন, যুদ্ধের পতাকার শব্দ এবং ঘোড়ার হুংকার তাদের মোহাচ্ছন্ন করে তোলে। তারা আবার সেই পুরাতন মতবিরোধে ফিরে যায়; তারা রাসুলের (সা.) ঘোষণা ভুলে গিয়ে অল্প মূল্যের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দেয়-কতই না খারাপ এই লেনদেন!"
সূত্র: সিররুল আলামাইন ওয়া কাশফু মা ফিদ দারাইন, আবু হামিদ গাজালী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪, অধ্যায়: খিলাফত ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সজ্জা।
এই বইটি এখানে পাওয়া যায়:
http://www.alwrraq.com
অনুবাদ: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষণগুলোর মধ্যে একটি বিখ্যাত ভাষণ হলো গাদীর খুমের ভাষণ, যা সকলেই স্বীকার করে থাকেন। সেখানে রাসুল (সা.) বলেছিলেন:
"যার আমি অভিভাবক, আলি তারও অভিভাবক।"
তখন ওমর বলেছিলেন:
"বাহ বাহ হে আবুল হাসান! আপনি আমার এবং প্রত্যেক বিশ্বাসীর অভিভাবক হয়ে গেছেন।"
এই কথা থেকে বোঝা যায় যে, হযরত ওমর রাসুলের (সা.) ঘোষণাকে স্বীকার করেছিলেন এবং হযরত আলিকে (আ.) উম্মতের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি নেতৃত্বের মোহে পড়ে যান এবং খিলাফতের পথ থেকে বিচ্যুত হন। যুদ্ধ, দলে দলে বিভক্তি এবং বিজয়-আবেগের মাধ্যমে উম্মতের মধ্যে মতভেদ এবং জাহেলিয়ার পথে ফিরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেন। এবং কুরআনের এই আয়াতের বাস্তব রূপ হয়ে যান:
"তারা তা (সত্য) পেছনে ফেলে দিল এবং তার পরিবর্তে সস্তা জিনিস গ্রহণ করল-কতই না খারাপ লেনদেন।"
এ বিষয়টি অন্যান্য আহলে সুন্নাত আলেম যেমন ইমাম যাহাবিও গাজালীর থেকে বর্ণনা করেছেন, যদিও তিনি ওমরের পক্ষে কিছু পরিবর্তন করেছেন।
সূত্র: সিয়ারু আ‘লামুন্নুবালা, খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩২৮, জীবনী: আবু হামিদ গাজালী।
অনেক মুসলমান শেষ পর্যন্ত আবু বকরের হাতে বাইআত করেননি; যেমন হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.), সা‘দ ইবনে উবাদা প্রমুখ। এমনকি অনেকে কয়েক মাস পর বাইআত করেছিলেন। কিন্তু আবু বকর যখন তার ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলেন, তখন তিনি জোর করে বিরোধীদের বাইআতে বাধ্য করেন।
আহলে সুন্নাতদের কাছে কুরআনের পর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই সহীহ বুখারী-তে মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর আবু বকরের ওপর অসন্তুষ্টির এবং বাইআত না করার ঘটনা লিখেছেন:
"তখন ফাতিমা (সা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কন্যা আবু বকরের ওপর রাগান্বিত হন এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন, এবং এই অবস্থা বজায় রেখেছিলেন যতক্ষণ না তিনি ইন্তিকাল করেন।"
(সহীহ বুখারী, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪২, হাদীস ২৮২৬)
এছাড়া আরও অনেক সাহাবীও আবু বকরের বিরুদ্ধে ছিলেন। যেমন:
"রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর আনসারগণ আমাদের বিরোধিতা করে সাকিফা বনু সাঈদা-তে একত্রিত হন। আলি (আ.), যুবাইর এবং যারা তাদের সাথে ছিল তারাও আমাদের বিরোধিতা করেছিল।"
(সহীহ বুখারী, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৬, কিতাবুল মুহারিবীন)
আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন:
http://valiasr-aj.com/fa/page.php?bank=salam&id=7
[৪৯৫৭]


রিপোর্ট: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha