হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ছিলেন মরহুম শেইখ সাদুক (রহ.)। কিন্তু মৃত্যুর আগে তার একটি ব্যতিক্রমধর্মী ওসিয়ত আজও মানুষের হৃদয়ে বিস্ময় ও ভাবনার ঢেউ তোলে।
তিনি ওসিয়ত করেছিলেন, “আমাকে কোম বা নাজাফে দাফন করো না।”
জিজ্ঞেস করা হলে কেন, তিনি উত্তর দেন এমন এক কথায়, যা ইলম, ঈমান ও ইনসাফের নিখুঁত সমন্বয়: “কারণ যারা ফাতিমা মাসুমা (সা.)-এর মহিমান্বিত দরবারের পাশে অথবা নাজাফে দাফন হন, তারা কিয়ামত দেখবেন না। তারা কবর থেকে উঠেই জান্নাতে চলে যাবেন।”
শোনার পর উপস্থিত জনতা বলেছিলেন, “হুজুর, এটা তো উত্তম! কী সৌভাগ্য!”
কিন্তু শেইখ সাদুক বলেছিলেন: “না! আমি কিয়ামত দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই যারা আমিরুল মোমিনিন আলী (আ.)-এর ওপর জুলুম করেছিল, তারা কী জবাব দেয়।”
এই কথাগুলো শুধু একজন আলেমের আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসের অবিচার ও বিকৃতির বিরুদ্ধে এক সাহসী অবস্থান। তিনি চান—সেই মহাজ্ঞানী বিচারদিবসে নিজ চোখে দেখতে, কারা কারা ইসলামের প্রকৃত পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল, আর কী জবাব তারা আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-কে দেবে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়
শেইখ সাদুকের কথাগুলো হাওয়ায় ভাসমান নয়। বরং তিনি কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে এক সুস্পষ্ট ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেন।
ইতিহাসের বিখ্যাত গ্রন্থ “তারীখে তাবারী” (৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২১) এবং ইবনে আসীর (৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮০) থেকে জানা যায়, নবী করিম (সা.) তার নবুয়তের প্রারম্ভেই আলী (আ.)-এর খেলাফত ঘোষণার স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেছিলেন:
"هٰذا أَخي و وصيّي و خليفتي فيكم"
“এই হচ্ছে আমার ভাই, আমার ওসী (উত্তরাধিকারী), এবং আমার খলীফা তোমাদের মধ্যে।”
এমন অকাট্য বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও ইতিহাসে কিভাবে এই সত্য চাপা পড়ল? কিভাবে উম্মাহ আলীর (আ.) অধিকার অস্বীকার করল? সেই দৃশ্য তিনি নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলেন কিয়ামতের দিনে।
এক অসাধারণ বোধের বার্তা
শেইখ সাদুকের এই কথাগুলো শুধু ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণ নয়, বরং এটি হলো ইসলামোফোবিয়া ও বিকৃত ইতিহাসের বিরুদ্ধে এক জ্ঞানগর্ভ প্রতিবাদ। তিনি যেন বলতে চেয়েছেন—সত্যকে জানো, খোঁজো, আর চোখ মেলে ইতিহাসকে দেখো।
এই মহান আলেমের হৃদয় থেকে উঠে আসা আকুতি আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইসলাম কেবল নাম ও রীতির ধর্ম নয়; বরং এটি ন্যায়, ইনসাফ, এবং সত্য-প্রতিষ্ঠার ধর্ম।
আপনার কমেন্ট