রবিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৩:১০
কোনো দায়িত্বই যেন ছাত্রদের তাবলীগ থেকে আলাদা না করে

শিয়া ইতিহাস জুড়ে আমাদের চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতাদের দৃষ্টিতে তাবলিগ ছিল একটি দায়িত্ব (রিসালাত), কোনো পেশা নয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়াহর উচ্চ পরিষদের দ্বিতীয় সম্পাদক আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ মারভি জোর দিয়ে বলেন, “কোনো দায়িত্বই এমন নয় যা একজন তালেবে ইলমকে (ধর্মীয় ছাত্রকে) তাবলীগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবে।” তিনি বলেন, শিয়া ইতিহাস জুড়ে আমাদের চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতাদের দৃষ্টিতে তাবলিগ ছিল একটি দায়িত্ব (রিসালাত), কোনো পেশা নয়।

এই বক্তব্য তিনি দেন কুমে অবস্থিত “ইয়াওরান মাহদি কমপ্লেক্স”-এর গাদির হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রদেশ ও শহরের তাবলিগ বিষয়ক সহকারী, এবং আমিন প্রকল্পের স্কুল প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা কোর্সের উদ্বোধন হয়।

তাবলীগ: ধর্মের স্থায়িত্ব ও টিকে থাকার উপাদান

আয়াতুল্লাহ মারভি বলেন, ইসলাম-যা সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক এক আসমানী শরিয়ত-প্রচারের মাধ্যমেই জন্ম নিয়েছে, প্রচারের মাধ্যমেই টিকে আছে, এবং প্রচারের মাধ্যমেই অমর হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই টিকে থাকা ও অমরত্ব এসেছে সেই মহৎ প্রচারকদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে, যারা ইতিহাস জুড়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন মাযহাব প্রচার ও আল্লাহর বান্দাদের সঠিক পথে দিকনির্দেশ দিতে।

তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, আজ আমরা দেখি, বিশ্বের নানা প্রান্তে আহলে বাইতের অনুসারীরা উপস্থিত আছেন-যা সম্ভব হয়েছে মুবাল্লিগদের তাবলিগি প্রচেষ্টার বরকতে।

আয়াতুল্লাহ মারভি আরও বলেন, ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কাছে ধর্মীয় জ্ঞান ও শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া।
তিনি নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: রাসুলের প্রেরণ, আল্লাহর পথে জিহাদ ও যুদ্ধ, এবং ইসলামি সরকারের প্রতিষ্ঠা-এই সবই মানুষের পবিত্র হৃদয়ে সত্য ধর্মীয় বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ভূমিকা পালন করে।

তাবলীগ একটি দায়িত্ব, পেশা নয়

তিনি বলেন, শিয়া ইতিহাসে আমাদের চিন্তাবিদ ও আলেমদের দৃষ্টিতে প্রচার কখনোই চাকরি বা জীবিকা অর্জনের মাধ্যম ছিল না; এটি ছিল এক মহান রিসালাত, এক দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, একজন প্রকৃত মুবাল্লিগের জন্য প্রয়োজন সার্বিক যোগ্যতা, কারণ মানুষ তাদের ধর্মীয় প্রশ্ন ও জীবনের বহু সমস্যার উত্তর মুবাল্লিগদের কাছেই খোঁজে।

“বৈজ্ঞানিক ও জ্ঞানগতভাবে মুবাল্লিগদের শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি,” তিনি বলেন। প্রচারক্ষেত্রে যারা সক্রিয় আছেন, তারা যেন নিজেদের প্রস্তাবনা ও মতামত পেশ করেন, যাতে উচ্চ পরিষদ নীতিনির্ধারণে তা কাজে লাগাতে পারে। কারণ, শূন্য পরিবেশে নীতিনির্ধারণ কার্যকর হয় না।

আয়াতুল্লাহ মারভি আরও বলেন, কুরআনের পর শিয়াদের তাবলিগের জন্য দুইটি মৌলিক কেন্দ্রবিন্দু হলো নাহজুল বালাগা ও সাহিফা সাজ্জাদিয়া। এই দুই গ্রন্থের সাহায্যে শিয়া বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমাদের উচিত এই দুই কিতাবের সঙ্গে অধিক ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করা।

কোনো দায়িত্বই যেন প্রচার থেকে দূরে না রাখে

শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো দায়িত্বই এমন নয় যা একজন তালেবেকে প্রচার থেকে আলাদা করতে পারে বা করা উচিত।

তিনি মুবাল্লিগদের উদ্দেশে বলেন, তাবলীগে আত্মশুদ্ধি ও নিজের কথার বাস্তব অনুশীলন অত্যন্ত প্রভাবশালী। মানুষ প্রথমে আমাদের আখলাক ও আত্মিকতা দেখে, তারপর আমাদের বক্তব্য শুনে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha