হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়া কোমের ১০০ বছরের প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন মাদরাসা ইমাম কাজিম (আ.) কোমুল মুকাদ্দাসায় আয়োজিত হয়। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী প্রখ্যাত আলেম এবং গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত প্রদান করেন। এই অনুষ্ঠানে হাওজা নিউজের প্রতিনিধির সঙ্গে হাওজা ইলমিয়া গফরান মাআব লক্ষ্ণৌ-এর পরিচালক মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন।
এই সাক্ষাৎকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: প্রথমে আমাদের পাঠকদের জন্য আপনার পরিচয় এবং ভারতবর্ষে আপনার কার্যক্রম সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন।
মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। আমার নাম সাইদ রেজা হায়দার জাইদী। আমার জন্ম বারাবানকিতে। প্রাথমিক শিক্ষা আমি লক্ষ্ণৌর মাদরাসা নাজমিয়া সুলতানুল মাদারেস থেকে লাভ করি। ১৯৮৭ সালে সিরিয়া যাই, যেখানে ৮ বছর আমি হাওজা ইলমিয়া ইমাম খোমেনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। ১৯৯৫ সালে ইরান চলে আসি এবং বর্তমানে লক্ষ্ণৌতে বসবাস করছি। এখানে আমি হাওজা ইলমিয়া গফরান মাআব-এ শিক্ষকতা করছি। এছাড়াও, আসফি মসজিদে ইমাম জুমা হিসেবে সেবা দিচ্ছি এবং প্রচারমূলক কাজও চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি আজকের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন, এর প্রেক্ষিতে আপনি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আলোচিত করতে চান?
মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী: সম্মেলনের উদ্দেশ্য হাওজা ইলমিয়া কোমের ১০০ বছরের প্রতিষ্ঠা উদযাপন করা, এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১০০ বছর আগে আয়াতুল্লাহ আল-উজমা আব্দুল কারিম হায়রি (রহ.) হাওজা ইলমিয়ার আধুনিক রূপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এবং তার ভিত্তি আজ আমাদের সামনে রয়েছে। আখায় হায়রি (রহ.)-এর মহত্বের কথা বলা হচ্ছিল, যিনি ৫০,০০০ তুমানের ঋণ নিয়ে হৌযা চালিয়ে ছিলেন, যা তখনকার সময়ে একটি বড় অঙ্কের অর্থ ছিল। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ ছিল যে তিনি ভাবছিলেন না ঋণ কোথা থেকে পরিশোধ করবেন, বরং তার চিন্তা ছিল যে, কেয়ামতের দিনে আল্লাহর সামনে তিনি কীভাবে উত্তর দেবেন।
আজ আমরা যখন ভারতবর্ষে হাওজা ইলমিয়ার অবস্থার দিকে তাকাই, তখন বুঝতে পারি যে, আমরা কেন হাওজাকে সেই রকম উন্নতি দিতে পারিনি যেমন অন্য জায়গায় হয়েছে। হাওজা ইলমিয়ার টিকিয়ে রাখা সবসময় আলেম ও ছাত্রদের পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীল, যেমন ইমাম হোসেন (আ.)-এর ত্যাগকে আলেম ও ছাত্ররা বিশ্বব্যাপী পৌঁছিয়েছে। আজ আমাদের মনোযোগ দিতে হবে যে, আমাদের হাওজা ইলমিয়ার বর্তমান অবস্থা কী এবং তার উন্নতির জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার মতে, ভারতবর্ষে শিয়া সম্প্রদায় এবং হাওজা ইলমিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী: ভারতবর্ষে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো, আমাদের আলেম এবং প্রচারকরা বেশিরভাগ সময় এটি নিয়ে চিন্তা করেন না যে, জনগণের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায়। আগে মাদরাসায় শিক্ষকরা শুধুমাত্র পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকতেন, কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ, শিক্ষকরা মঞ্চে আসছেন এবং জনগণের স্তরে কাজ করছেন। এর ফলে জনগণের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে কিছু মানুষ এই পরিবর্তন পছন্দ করেন না এবং শিক্ষকদের উপর অভিযোগ তুলছেন, যা একটি দুঃখজনক বিষয়।
প্রশ্ন: মিডিয়ার ক্ষেত্রে আপনি কী বার্তা দিতে চান?
মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী: এটি মিডিয়ার যুগ, এবং এখন আমাদের কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, তবে শত্রুদের পক্ষ থেকে ছড়ানো মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে আমরা বিশ্বব্যাপী উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হচ্ছি না। আমাদের কাছে যে প্রকৃত জ্ঞান রয়েছে, তা এমনভাবে ছড়াতে হবে যাতে তা মানুষের কাছে পৌঁছায়। মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের বার্তাগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো উচিত। আলেমদেরও উচিত মিডিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তাদের বার্তা বিশ্বের প্রতি কোণে পৌঁছে দেওয়া। যদি আমরা যুগের ভাষায় কথা না বলি, তবে আমাদের বার্তাগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। তাই আমাদের বক্তৃতাগুলোর মধ্যে এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে, আমরা কীভাবে আমাদের বার্তাগুলো আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে পারি।
প্রশ্ন: আপনার মতে, আলেমদের কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
মাওলানা রেজা হায়দার জাইদী: আলেমদের উচিত তাদের বক্তৃতা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন এমনভাবে করতে যাতে তা শুধুমাত্র তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বৃহৎ জনগণের মধ্যে পৌঁছায়। এর জন্য আমাদের আধুনিক ভাষা, পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে যাতে আমাদের বার্তা যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, তারা মুসলিম হোক বা অমুসলিম।
ভারতবর্ষে শিয়া সম্প্রদায়কে তাদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং মিডিয়া সহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চারণ করতে হবে। আমাদের জ্ঞানকে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে পৌঁছাতে হবে যাতে আমাদের শত্রুদের মিথ্যার মোকাবেলায় আমাদের সত্য উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
হাওজা নিউজ: আমরা আপনার অমূল্য সময় দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
আপনার কমেন্ট