হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের নারী ও পরিবার গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোহাম্মদ রেজা জিবয়ি নেজাদ “পিতার অভাব” বিষয়ক একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে নিজের মতামত প্রকাশ- যা আপনাদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
প্রশ্ন: যে পরিবারে পিতা উপস্থিত নেই (ইহলোক ত্যাগ করেছে কিংবা দূরবর্তী স্থানে থাকেন), মা কীভাবে তার শিক্ষাগত ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারেন এবং পিতার অভাব পূরণ করতে পারেন?
উত্তর: যখন পরিবারে পিতা অনুপস্থিত থাকেন, তখন এটি মায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আজকের মায়েদের মানসিকতা, যারা সাধারণত সন্তানের প্রতি একধরনের মালিকানাবোধ অনুভব করেন।
অন্য কথায়, মা মনে করেন যে সন্তান শুধুমাত্র তারই এবং পিতা হলেন অন্যান্য ব্যক্তি যাদের সন্তানের শিক্ষায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে আসে, যেখানে নারী পিতামহের নেতৃত্বমূলক ভূমিকা মেনে নিতে বা তার শিক্ষাগত দায়িত্বকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নন। এমনকি বৃহত্তর পর্যায়ে, আইনপ্রণেতাও অনেক ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেন যা মায়ের পক্ষে যায় এবং পিতামহের ভূমিকা উপেক্ষা করা হয়।
অথচ, যদি মা পিতামহের ভূমিকা ও মর্যাদা সঠিকভাবে বুঝতে পারেন এবং তা সম্মান করতে পারেন, তাহলে তিনি সন্তানের শিক্ষা ও নির্দেশনায় এই ব্যক্তিত্বের সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন এবং নিজের উপর চাপ কিছুটা কমাতে পারেন।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, পিতার অনুপস্থিতি মূলত একটি জরুরি পরিস্থিতি। অর্থাৎ, মাকে এমন দায়িত্ব নিতে বাধ্য হতে হয় যা প্রকৃতপক্ষে তার নারীর ভূমিকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এই প্রসঙ্গে, আমি অনেক বছর আগে একজন শহীদ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি যেহেতু শহীদের স্ত্রী, আপনি কি আপনার সন্তানদের জন্য পিতার অভাব পূরণ করতে পেরেছেন?” তার উত্তর আমার জন্য খুবই চমকপ্রদ ছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমি (পিতার অভাব পূরণের) ভান করি, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়।”
এর মানে হলো, মা পিতার ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেন এবং এমনকি বাহ্যিকভাবে তা গ্রহণ করতে বাধ্য হন, কিন্তু পিতার সম্পূর্ণ বিকল্প হওয়া সম্ভব নয়।
মা যদিও সন্তানের যত্ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন, তাকে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে এই দায়িত্ব স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে অধিকতর কঠিন। এটি মূলত একটি জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে গৃহীত একটি বিশেষ ভূমিকা।
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পিতার অনুপস্থিতিতে সন্তান লালন-পালনের সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য শিক্ষাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং পারিবারিক পরামর্শসেবা - এই তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্রের জ্ঞানের প্রয়োজন।
এখানে এটি পরিষ্কার করা জরুরি যে এই বিষয়গুলোর গভীর বিশ্লেষণ পুরোপুরিভাবে ধর্মীয় পরিধির আওতাধীন নয় এবং আমার পেশাগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই বিষয়ে অতিরিক্ত আলোচনা মূল প্রসঙ্গ থেকে আমাদের বিচ্যুত করতে পারে। তাই আমি কেবল এর ধর্মীয় দিকগুলোই আলোচনা করতে পারি, প্রয়োজনীয় অন্যান্য দিকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেই জানা উচিত।
ধারাবাহিকভাবে চলবে...
আপনার কমেন্ট