রবিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৫:৫৬
মুসলিম নারীর হিজাব পশ্চিমা সভ্যতার বিপরীতে তার পরিচয়ের প্রতীক

আয়াতুল্লাহ সাইফি আমুলি বলেন, মুসলিম নারীর হিজাব পশ্চিমা সভ্যতার বিপরীতে তার ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক। তিনি বলেন, ইসলামের শত্রুরা সহ্য করতে পারে না যে একজন মুসলিম নারী ইসলামি হিজাব মেনে সমাজে উপস্থিত থাকুক। প্রকৃতপক্ষে তারা ভয় পায় যে পরহেজগার নারীরা পশ্চিমা সমাজের নারীদের জন্য আদর্শে পরিণত হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলী সাইফি আমুলি, হাওজা ইলমিয়ার অধ্যাপক, তেহরানে হাওজা নিউজ এজেন্সি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন: শত্রুর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অনুপ্রবেশ একটি সংগঠিত, জটিল ও ধর্মবিরোধী প্রকল্প। তিনি বলেন, শত্রুরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে সাংস্কৃতিক দুর্গ দখল করতে পারলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মূল কাঠামোয় আঘাত হানা সম্ভব। তাই এই খাতে শত্রুরা সর্বাধিক বিনিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক ক্ষেত্র। যদিও আজকের সমাজে অধিকাংশ দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে পবিত্রতা ও হিজাবের বিষয়ে, কিন্তু যদি আমরা সংস্কৃতিকে গভীর ও জ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে এই একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আজ সংস্কৃতির ক্ষেত্র ইসলামি প্রজাতন্ত্র ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদীদের মুখোমুখি অবস্থানে অগ্রভাগে রয়েছে। তাই যদি এই ক্ষেত্রে অবহেলা বা গাফিলতি হয়, তাহলে শত্রু অবশ্যই বড় সাফল্য অর্জন করবে। পশ্চিমা ধ্বংসাত্মক, অমানবিক জীবনধারা প্রচার করলে তা নিঃসন্দেহে ধর্মীয় ভিত্তি ধ্বংস করতে পারে।

হিজাব ও পবিত্রতা সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ
আয়াতুল্লাহ সাইফি আমুলি বলেন, হিজাব ও পবিত্রতা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি উল্লেখ করেন, গত দুই দশক ধরে—বিশেষ করে ১৪০১ সালের (২০২২ খ্রিস্টাব্দ) বিশৃঙ্খলার সময়—শত্রুরা ইরানের জাতীয় ও ধর্মীয় বিশ্বাস দুর্বল করার জন্য এই ক্ষেত্রটিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তাই সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক ও প্রচারমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব ও পবিত্রতা নিয়ে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্তরে দুর্বল পরিকল্পনা হয়েছে। এই কৌশলগত ভুল দেশের বিশ্বাসভিত্তিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই এই ক্ষেত্রে সমন্বিত, সুনির্দিষ্ট ও জ্ঞাননির্ভর পরিকল্পনা অপরিহার্য।

তিনি বলেন, হিজাবের সামাজিক দিকও আছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাবও রাখে। তাই সব ধরনের নীতিমালা ও কার্যক্রমে এই দিকটি বিবেচনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজের নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। যদি নারী ও পুরুষ উভয়ই সততা ও শালীনতা বজায় রাখে, তবে সমাজ নৈতিক বিপর্যয় ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে।

শত্রুর ভয় — পরহেজগার নারী পশ্চিমা নারীদের আদর্শে পরিণত হতে পারে
হাওজার অধ্যাপক বলেন, মুসলিম নারীর হিজাব পশ্চিমা সভ্যতার বিপরীতে তার ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক। তাই ইসলামের শত্রুরা সহ্য করতে পারে না যে মুসলিম নারী ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সমাজে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকুক। তাদের আশঙ্কা, হিজাব পরিহিতা নারীরা পশ্চিমা নারীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে উঠতে পারে।

তিনি আরও বলেন, হিজাব ও পবিত্রতা নিয়ে নতুন প্রজন্মের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি ভালোভাবে বোঝা জরুরি। তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা ও পোশাকে বৈচিত্র্য খোঁজে, কিন্তু তা মানেই নয় যে তারা ধর্মবিরোধী বা সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চায়। আসলে নতুন প্রজন্মও ধর্মবিশ্বাসী, শুধু তাদের ধর্মীয় আচরণ পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে ভিন্ন। এটি হিজাববিরোধী মনোভাবের প্রতীক নয়।

শেষে আয়াতুল্লাহ সাইফি আমুলি বলেন, আজকের ইরান সমাজে সংস্কৃতি, বিশেষ করে পবিত্রতা ও হিজাবের ক্ষেত্রটি একটি রূপান্তরের পর্যায়ে আছে। তাই এই বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যালোচনা ও গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন। বর্তমান সমাজে হিজাববিষয়ক সংকট মোকাবিলায় একটি সর্বাঙ্গীণ, দীর্ঘমেয়াদি ও অগভীরতা-বর্জিত পরিকল্পনা প্রণয়ন অপরিহার্য।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha